সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি করুন
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ইরান ও ইসরায়েল। শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইরানের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। তেহরান, নাতাঞ্জসহ অন্তত ১৫টি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ড্রোন ও বিমান হামলায় নিহত হন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা, পরমাণু বিজ্ঞানীসহ বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা। এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করে বলেছেন—‘সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই একটি চুক্তিতে আসতে হবে।’
নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “আমি তাদের অনেকবার সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কাছাকাছি গিয়েও তা সম্পন্ন করতে পারেনি। বহু মৃত্যু ও ধ্বংস ইতোমধ্যে ঘটে গেছে। পরবর্তী হামলাগুলো আরও ভয়াবহ হবে। এখনই চুক্তি করতে হবে, নয়তো ইরান কিছুই হারানোর মতো অবস্থায় থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, “ইরানকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর মৃত্যু নয়, আর ধ্বংস নয়—চুক্তিটি করো, এর আগে সবকিছু শেষ হয়ে যায়।”
ট্রাম্প জানান, তিনি আগেই ইসরায়েলের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানে সরাসরি জড়িত নয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও একই কথা বলেছেন—এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সহায়তা ছিল না। ওয়াশিংটনের একমাত্র অগ্রাধিকার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিক ও সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এই পরিস্থিতিতে আগামী রোববার (১৫ জুন) ওমানের মাস্কাটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ষষ্ঠ দফা আলোচনার কথা ছিল। তবে ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষিতে এ আলোচনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প বলেন, “আমরা আলোচনার টেবিলে ফিরতে চাই। তবে কোনোভাবেই ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না।”
ইসরায়েলি হামলার পর পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি বলেন, “পারমাণবিক স্থাপনাগুলো কখনোই সামরিক লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত নয়। এটি শুধু ইরানের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের জন্যও মারাত্মক হুমকি তৈরি করে।”
এদিকে, সৌদি আরব, চীন, জাপান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ওমান সরাসরি ইসরায়েলকে দায়ী করেছে এই উত্তেজনা ও পরিণতির জন্য।
এই হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি, সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, পরমাণু বিজ্ঞানী ফেরেদুন আব্বাসি ও মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচি এবং আইআরজিসির অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ড ইরানের নিরাপত্তা কাঠামো ও কৌশলগত অবস্থানে বড় ধাক্কা। একইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের ভঙ্গুর ভূরাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলেছে এই ঘটনা।
ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণাগার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের অবস্থান। তবে আইএইএ নিশ্চিত করেছে, ফোরদো, ইস্পাহান ও বুশেহরের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ মাত্রাও স্বাভাবিক রয়েছে। যদিও ইরান এখনও সব ক্ষয়ক্ষতির তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।