ঐতিহ্যবাহী কালিবাড়ী চামড়া হাটে কেনা-বেচার সোনালী অতীত শুধুই স্মৃতি
গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী কালিবাড়ী হাটে চামড়ার আমদানি কেনা-বেচার সোনালী অতীত শুধুই যেন স্মৃতি। এবারের বাজার মূল্য গত বছরের তুলনায় একটু হলেও ভালো।
দেশের অন্যতম চামড়া কেনা-বেচার হাট পলাশবাড়ী পৌরশহরের ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ীহাট। সপ্তাহের প্রতি বুধবার চামড়ার হাটটি বসে আসছে।
শুধু উত্তরাঞ্চল নয় রাজধানী ঢাকা থেকে ট্যানারি শিল্প, আড়ৎদার, লেদার কোম্পানি সমূহ, ছোট-বড় ক্রেতা, স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও চামড়া শিল্পের সাথে সম্পৃক্তরা হাটটিতে আসেন। সারাবছরের ধারাবাহিকতায় বিশেষ করে বছরের দুই ঈদে হাটটির আঙ্গিনা চামড়া বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। কিন্তু তেমনটি আর নেই।
এবারের কোরবানির ঈদ-উল-আযহা হয়েছে গত (৭ জুন) শনিবার। ঈদ পরবর্তী (১১ জুন) বুধবার চামড়া হাটে নির্দিষ্ট পরিমাণ চামড়া না আসায় হাটটি বসেনি। আজ বুধবার (১৮ জুন) চামড়া হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারনায় সামান্য চাঙাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরআগে গত সোমবার (১৬ জুন) দুপুর থেকে হাটটিতে অল্প পরিমাণে চামড়া আসা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বুধবার ভোর হতে চামড়া যাচাই-বাছাইয়ের সাথে কেনাবেচা শুরু হয়ে তা চলে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত। ট্যানারি, লেদার কোম্পানি, মহাজন এবং কোম্পানীর প্রতিনিধিদের পদচারণা ঘটলেও এবারে কোরবানির চামড়ার মূল্য বলতে গেলে ছিল কিছুটা ভালো। এক্ষেত্রে গরুর চামড়ার বিনিময় মূল্য থাকলেও ছাগর-ভেড়ার চামড়া হয়ে পড়ে প্রায় মূল্যহীন।
হাট ইজারাদার গং আলহাজ্ব শাহ আলম সরকার-এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, হাটটি আগের স্থানে আর নেই। প্রতি বছরের তুলনায় ইজারা দর কম হলেও আমরাও ইজারা কম নেই। কারণ আমদানি কম, ক্রেতা-বিক্রেতা কম। সরকার কর্তৃক প্রতি পিস গরুর চামড়ার খাজনা নির্ধারিত রেটের চেয়েও কম রাখি।
গরুর চামড়া প্রতি পিস ৩৮ টাকার স্থলে ২০-২৫ টাকা, খাশি-বকরি ১৫ টাকার স্থলে ৪-৫ টাকা। চামড়ার দরপতনের দুরাবস্থার কথা চিন্তা করেই খাজনা কম রাখা হয়। এমনিতেই এবছর লোকসানের সম্ভাবনা। উপরন্ত জমা কম রাখায় এবারে লোকসানের সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
গত বছরের চেয়ে এবারও কোরবানীর চামড়ার আমদানী মোটামুটি ভালো তাই হাটটি একটু হলেও জমে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে হাটে আসা চামড়া ক্রেতা-বিক্রেতা মহাজন ও ফঁড়িয়াদের চরম হতাশ থেকে একটু হলেও মুক্তি মিলেছে। চামড়ার কাঙ্খিত দাম পূঁজি হারানোর হাত থেকে অন্ততঃ রক্ষা করেছে। তবে সরকার প্রদত্ত চামড়ার নির্ধারিত মূল্যের কোন তোয়াক্কাই করা হয়নি। সর্বোপরি লাভ না হলেও লগ্নিকৃত অর্থ ফিরে এসেছে। কোনো-কোনো ক্ষেত্রে মন্দ নয় ভালো রয়েছে বলে তারা জানান।
অন্যদিকে; বছরের পর বছর ট্যানারি মালিকদের নিকট টাকা পড়ে থাকায় স্বস্তিতে নেই পাইকাররাও। তারা ধার-দেনা করে মৌসুমি ব্যবসায়িদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন। এমন পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় এ বছর চামড়া প্রকারভেদে ভালো মানের প্রতিটি গরুর চামড়া ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা থেকে সর্বনি¤œ ২শ’ টাকা পর্যন্ত কেনা বেচা করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে কম মূল্যে চামড়া বিক্রি করে অপুরনীয় লোকসান গুনছেন তৃণমূল মৌসুমি চামড়া ক্রেতারা।
এবারে পান্না লেদার, আরকে লেদার, রিলায়েন্স, আকিজ ও এপেক্স গ্রুপের প্রতিনিধি, এবিএস লেদার, বুশরা লেদার ও সাবিনা ট্যানারি ছাড়াও স্থানীয়দের মধ্যে মিনু মন্ডল, নান্নু মিয়া, মাহামুদ হাসান, আজাহার আলী, শাহীন মিয়া ও এমদাদুল হকসহ অন্যান্যদের চামড়া কিনতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য; এ অঞ্চল ছাড়াও দেশের দুর-দুরান্ত থেকে বিক্রেতারা গরু-খাসির চামড়া নিয়ে হাটে আসেন। ইজারা কর্তৃপক্ষের ম্যানেজার মোস্তাক আহমেদ মোস্তা ও ফিরোজ কবির ফিরোজ জানান, প্রায় ১০ হাজার পিস খাসির চামড়ার আমদানি ঘটেছিল। কিন্তু প্রতি পিস খাসির চামড়ার মূল্য ছিল মাত্র ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে দু’একজন মৌসুমি ক্রেতা মনের রাগ- ক্ষোভ ও দুঃখে হাটস্থলেই চামড়া ফেলে রেখে চলে যান। হাটটিতে এবারে অন্ততঃ ২৫ থেকে ৩০ হাজার পিস গরুর চামড়ার আমদানি ঘটে। তন্মধ্যে প্রায় হাজার খানেক চামড়া অবিক্রিত থেকে যায়।
স্থানীয় প্রশাসন এবারও হাটটির ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় সুষ্ঠুভাবে কেনা- বেচা সম্পন্নে তৎপর ছিলেন।
থানা অফিসার ইনচার্জ মো. জুলফিকার আলী ভূট্টো জানান, চামড়া বেচা-কেনা এবং অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কাকতালীয় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত যাতে না ঘটে সেদিকে পুলিশের কঠোর নজরদারি রয়েছে।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।