Loading Now

এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তীব্র শিক্ষক

তীব্র শিক্ষক সঙ্কটে ভুগছে দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে দেশে ৩৩ হাজারেরও বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক শিক্ষকের পদই শূন্য। অথচ ওসব প্রতিষ্ঠানে দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই পড়াশোনা করে। কিন্তু শিক্ষক সঙ্কটে দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় পরিসরে শিক্ষক নিয়োগে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ওই নিয়োগে শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের একটি বড় অংশ অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকছে। ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নিবন্ধনধারীরা নিয়োগে আবেদন করতে পারবেন না। তাছাড়া যেসব প্রার্থীর নিবন্ধন সনদ তিন বছরের বেশি সময় আগে পাওয়া, তারাও এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হবেন না। ফলে সুযোগ পাবেন না অপেক্ষায় থাকা নিবন্ধন সদনধারী দেড় লাখ প্রার্থী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মত, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে স্নাতক- -স্নাতকোত্তর করা বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে নিবন্ধন সনদ অর্জন করেছে। কিন্তু তারপরও দুই শর্তের কারণে অনেকেই আবেদনবঞ্চিত হচ্ছেন। মূলত বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে শিক্ষক হতে চাইলে অবশ্যই শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সনদ থাকতে হয়।

আর ওই সনদধারীদের মধ্য থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ শিক্ষক নিয়োগের যাবতীয় কাজ করতো। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য বা উপজেলা চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বাধীন ওসব পর্ষদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠতে থাকে। আর ওই বাণিজ্য ঠেকাতে ২০১৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা সংশোধন করে।

তাতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আসে। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর নতুন নিয়মের পরিপত্র জারি করা হয় ; যাতে বলা হয়- এনটিআরসিএ প্রতি বছর মেধার ভিত্তিতে যে প্রার্থীকে সুপারিশ করবে, পরিচালনা পর্ষদকে তাকেই নিয়োগ দিতে হবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নিবন্ধন সনদ পেতে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে অন্তত ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। বর্তমানে নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর।

এ সনদধারীরা ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ১ হাজার টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারে। আবেদনে একজন প্রার্থী নিজ বিষয়ে ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বেছে নিতে পারে। নিবন্ধন পরীক্ষায় ওই প্রার্থীর পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে তাকে ওসব প্রতিষ্ঠানের একটিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। সুপারিশপত্র নিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করে থাকে।

সূত্র জানায়, এনটিআরসিএ যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় সংস্থাটি ক্ষমতা বাড়লেও চাহিদা মতো শিক্ষক সরবরাহ করতে পারছে না। বছরের পর বছর এ সংকট চলায় শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছরের ৩১ মার্চ এনটিআরসিএ পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৭৩৬টি। তার মধ্যে স্কুল-কলেজের শূন্যপদ ছিল ৪৩ হাজার ২৮৬টি এবং মাদ্রাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরিপ্রতিষ্ঠানে ৫৩ হাজার ৪৫০টি। পরে গত ২১ আগস্ট প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১৯ হাজার ৫৮৬ জন প্রার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগে সম্মতি দেয়। ৭৭ হাজার ৫০০ পদ ফাঁকা ছিল। তাছাড়া চলতি বছরে অবসরের কারণে শূন্য হয় আরো ২০ থেকে ২৫ হাজার পদ। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। তারপর থেকে পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, এনটিআরসিএর ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি এখন দেশের শিক্ষা খাতে অন্যতম বৃহৎ নিয়োগ উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে ওই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে পদের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর আগে পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।

এবার তা আরো বড় পরিসরে হচ্ছে। আবেদনকারীরা এনটিআরসিএর নির্ধারিত ওয়েবসাইটে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদনের জন্য প্রার্থীদের অবশ্যই বৈধ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ থাকতে হবে এবং বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো কার্যক্রম এনটিআরসিএর নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এ ব্যবস্থায় প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই, প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মিলিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুপারিশ তৈরি করা হবে, যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

এদিকে এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের (বাশিফ) নেতারা শিক্ষকসংকট পরিস্থিতির জন্য এনটিআরসিএকেই দায়ি করছে। তাদের মতে, একদিকে প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইভা- তিন ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও একজন প্রার্থীকে এনটিআরসিএ চাকরি দিতে পারে না। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর পদ ফাঁকা। যা আসলে সমন্বয়ের অভাব।

শিক্ষক নিবন্ধনের প্রক্রিয়া থেকে নিয়োগের সুপারিশ পর্যন্ত সব কটি ধাপ শেষ হতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ফলে অনেক প্রার্থী অন্য পেশায় চলে যান, আর শিক্ষক পদ শূন্যই থেকে যায়। ফলে শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজগুলো। এগুলোর সরকারি হিসাব অনুযায়ীই ৭০ শতাংশ শিক্ষক পদ খালি। জনশক্তি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর অধীন কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষক পদ শূন্য।

অন্যদিকে এ বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ইতিমধ্যে এনটিআরসিএর বোর্ড সভায় ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। মোট শূন্য পদের সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজারের মতো। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান নন-এমপিও এবং অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছে। সেগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। ৯০ হাজারের বেশি পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালায় বয়স-সংক্রান্ত বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এমপিও নীতিমালার বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।