Loading Now

ফরজ গোসলের নিয়ম

অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক যে গোসল করতে হয় সেটিই ফরজ গোসল। তিন অবস্থায় এ গোসল ফরজ হয়। এ অবস্থায় গোসল না করলে অপবিত্র থাকতে হয়।

তাহলো- ১. ঘুম কিংবা জেগে থাকা অবস্থায় শারীরিক উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হলে ওই ব্যক্তির ওপর গোসল করা ফরজ। গোসল না করা পর্যন্ত সে অপবিত্র থাকবে। তবে ঘুমে থাকা অবস্থায় উত্তেজনা অনুভব না হলেও গোসল ফরজ। কারণ অনেক সময় ঘুমে স্বপ্নদোষ হলে টের পাওয়া যায় না।

ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর যদি কাপড়ে নাপাকির চিহ্ন দেখা যায় আর সেক্ষেত্রে স্বপ্ন দোষের কথা স্মরণ থাকুক আর না থাকুক এ অবস্থায়ও গোসল করা ফরজ। (হেদায়া)

২. স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর গোসল করা ফরজ। স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর গোপনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে। তাতে বীর্যপাত হোক আর না হোক; উভয়কে গোসল করতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সঙ্গে সঙ্গত হলে (সহবাস করলে), তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারি)

৩. হায়েজ-নেফাস থেকে মুক্ত হলে। নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়েজ) বন্ধ হলে এবং সন্তান প্রসব করার পর রক্ত (নেফাস) বন্ধ হলে পবিত্রতার নিয়তে গোসল করা ফরজ। যতদিন রক্ত বন্ধ না হবে ততদিন ওই নারী অপবিত্র থাকবে।

মহান আল্লাহতায়ালা কুরআনুল কারিমে নারী-পুরুষের যৌনমিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাতের মাধ্যমে কিংবা হাফেজ-নেফাসের কারণে অপবিত্র হলে তাকে পবিত্রতা হওয়ার নির্দেশ দেন এভাবে-ْ ‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা: মায়েদা, আয়াত : ৬)

ফরজ গোসল করার নিয়ম কি ?

উল্লেখিত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে ৩টি কাজ করা ফরজ। যথাযথভাবে এ ৩ কাজ আদায় না করলে গোসলের ফরজ আদায় হবে না।

কাজ তিনটি হলো-১. কুলি করা । (বুখারি, ইবনে মাজাহ)২. নাকে পানি দেওয়া। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)৩. সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। (আবু দাউদ)

তবে ফরজ গোসল সম্পন্ন করার সর্বোত্তম নিয়ম হলো-১. বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে গোসল শুরু করা। তবে গোসলখানা ও টয়লেট একসঙ্গে থাকলে বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ করে বলা যাবে না।

২. হাত ধোয়া। অর্থাৎ উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া। ৩. লজ্জাস্থান ধোয়া। বাম হাতে পানি দ্বারা লজ্জাস্থান পরিস্কার করা। সম্ভব হলে ইস্তিঞ্জা তথা পেশাব করে নেওয়া। এতে নাপাকি সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যাবে।

৪. নাপাকি ধোয়া। কাপড়ে বা শরীরের কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা ধুয়ে নেওয়া। ৫. ওজু করা। পা ধোয়া ছাড়া নামাজের অজুর ন্যয় অজু করে নেওয়া।

৬. অতঃপর ফরজ গোসলের তিন কাজ- কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। যাতে শরীরের একটি লোমকুপও শুকনো না থাকে। ৭. পা ধোয়া। সবশেষে গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।

গোসল ফরজ অবস্থায় পুরুষদের যেসব কাজ নিষিদ্ধ

ইসলামী আইনশাস্ত্রবিদরা বলেন, গোসল ফরজ হলে সেই গোসল না করে নামাজ, তাওয়াফ, কুরআন তিলাওয়াত ও কুরআন স্পর্শ করা এবং মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ। এছাড়া অন্যান্য কাজ প্রয়োজনে করা যেতে পারে।

ফরজ গোসলে নারীদের চুল ধোয়ার বিধান

ফরজ গোসলের সময় নারীদের চুলের গোড়াসহ সব চুল ধোয়া জরুরি। তবে চুল যদি খোঁপা বা বেণি বাঁধা থাকে এবং তা খুলে গোসল করা কষ্টকর হয় তাহলে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। তখন খোঁপা বা বেণি খুলে সব চুল ধোয়া জরুরি নয়।

ফিকহুল হানাফির প্রসিদ্ধ ফতোয়াগ্রন্থ আল বাহরুর রায়েকে আছে, নারীদের খোঁপা বা বেণি খুলে চুল ভেজানো কষ্টকর হলে খোঁপা থাকাবস্থায় চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। অবশ্য চুলে খোঁপা না থাকলে পুরো চুল ধোয়া সর্বসম্মতিক্রমে ফরয। (আল-বাহরুর রায়িক : ১/৫৪)

তবে একান্ত সমস্যা না হলে খোঁপা বা বেণি খুলে পুরো চুল ভিজিয়ে ভালোভাবে গোসল করা উত্তম। আমাদের সমাজের নারীরা যে ধরনের খোঁপা বা বেণি বাঁধে তা খোলা খুব কষ্টকর নয়। তাই যথাসম্ভব চুল খুলে গোসল করাই উত্তম।

কতক্ষণ ফরজ গোসল না করলে গুনাহ হবে

গোসল ফরজ হওয়া সত্ত্বেও বিনা ওজরে অপবিত্র অবস্থায় এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়া মারাত্মক গুনাহ। (বাদায়ে ১/১৫১)

নওফেল বিন মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যার নামাজ ছুটে গেল, যেন তার পরিবার ও সম্পদ সবই ধ্বংস হয়ে গেল। (মুসনাদে আহমাদ ২৩৬৪২)

ফরজ গোসলের আগে কি সেহরি খাওয়া যায়?

ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী গোসল ফরজ হওয়ার পর খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য কাজের আগে পবিত্র হয়ে নেয়া উত্তম। তবে জরুরি নয়। গোসল করা ছাড়াও খাওয়া যায়। কারণ সেহরি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয়, বরং সুন্নত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুভাবেই বর্ণিত আছে। তাই গোসল ফরজ অবস্থায়ও সেহরি খাওয়া যায়।

ফরজ গোসলের পরিবর্তে ওজু বা তায়াম্মুম করা যাবে?

অসুস্থতার কারণে ফরজ গোসল করতে সক্ষম না হলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবেন। এক্ষেত্রে ওজু করার প্রয়োজন নেই।

কেননা এক্ষেত্রে এই তায়াম্মুমই গোসল এবং ওজুর জন্য যথেষ্ট। আর এই তায়াম্মুম দ্বারা তিলাওয়াত, নামাজ ইত্যাদি পড়তে পারবেন।

অবশ্য এরপর ওজু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন ওজু করতে হবে। আর পরবর্তীতে যখন গোসল করার সামর্থ্য হবে তখন গোসল করে নিতে হবে।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।