Loading Now

গাইবান্ধায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বেড়েছে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার

বিয়েতে ঘোড়ার গাড়ির বহরের দৃশ্য একসময় খুবই স্বাভাবিক হলেও আধুনিকতার দাপটে আজ তা হারিয়ে যাওয়া এক সোনালী অতীত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গাইবান্ধায় আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ঐতিহ্যবাহী রীতি। নবদম্পতিরা এখন আবার ফিরে যাচ্ছেন ঐতিহ্যের টানে, বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলতে বেছে নিচ্ছেন ঘোড়ার সাজানো বাহন।

আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বিয়ের বাহনে এসেছে বিলাসবহুল গাড়ি, কিংবা হেলিকপ্টার পর্যন্ত। কিন্তু এসব ছাপিয়েও অনেকেই আজ ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন শিকড়ের টানে। প্রযুক্তির ভিড়ে যখন দেশের পুরোনো ঐতিহ্য গুলো তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম তখন নিজের বিয়ের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট ইউনিয়নের পালানপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আকন্দ মিয়া।

বিকেলে বাহারি ফুল আর রঙিন কাপড়ে সাজানো এক ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে যাত্রীসহ রংপুরের পীরগঞ্জের কাবিলপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আবেদ আলীর বাড়িতে হাজির হয় বরপক্ষ। ঘোড়ার গাড়িতে বর ও বরযাত্রী দেখে পথের দুই ধারে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ উপভোগ করেন এই বিরল দৃশ্য। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও ফিরে যান অতীতের স্মৃতির গলিতে।

বিয়ের এমন আয়োজনে শুধু কনে পক্ষই নয়, পুরো এলাকা মেতে ওঠে উৎসবে। স্থানীয়রা বলছেন, এমন দৃশ্য বহু বছর পর দেখলেন তারা। সত্যিই গ্রামবাংলার ঐতিহ্যই আলাদা। ঘোড়ার গাড়ির চাকা যেমন ঘুরছে, তেমনই আবেগে ঘুরে আসছে অতীতের ছোঁয়া। আর মনে করিয়ে দিচ্ছে, ঐতিহ্য মানেই গর্ব, স্মৃতি আর ভালোবাসার এক অমূল্য সম্পদ। বর আকন্দ মিয়া বলেন “বিয়ে জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। আমি চেয়েছিলাম আমার বিয়েতে কিছু আলাদা হোক। তাই ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করি। সবাই অনেক আনন্দ পেয়েছে।

অনেকে ছবি তুলেছে, ভিডিও করেছে।” ঘোড়ার গাড়ির এমন ব্যবহার নতুন করে ব্যবসায়িক সম্ভাবনারও দ্বার খুলে দিচ্ছে। গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষ করে চরাঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র বাহন এই ঘোড়ার গাড়ি গুলো ।শুকনো মৌসুমে এসব গাড়িতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা হলেও বর্ষা মৌসুমে নদ নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে এসব ঘোড়া দিয়ে আর গাড়ি টানা সম্ভব হয় না। তাই বছরের বেশীরভাগ সময় কর্মহীন থাকে ঘোড়ার গাড়ি চালকরা । বর্তমানে শহর বা সমতলের বিয়ে, বর্ণাঢ্য র‌্যালি বা ফটোশুটের দিন প্রতি গাড়ি ভাড়ার হার দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।

ঘোড়া পালনের সঙ্গে যুক্ত বালাসিঘাটের আবুল খায়ের বলেন, “আগে মনে হতো এ পেশা হারিয়ে যাবে। এখন আবার অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিয়ে উপলক্ষে ঘোড়ার গাড়ির চাহিদা বেড়েছে। গাইবান্ধা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাবুল আকতার বলেন, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ হলে সেখানেই জন্ম নেয় নতুন সংস্কৃতি। ঘোড়ার গাড়ির বহর দিয়ে বিয়ের আয়োজন তারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকাও কম নয়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউবে ভাইরাল কিছু ভিডিওই তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছে এমন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে।

প্রবীণ সাংবাদিক ও ছড়াকার সৈয়দ নুরুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, বিয়েতে ঘোড়ার গাড়ির বহর যেন শুধু বাহন নয়, এটি একটি নস্টালজিয়া, একটি ঐতিহ্যের পুনর্জন্ম। এই উদ্যোগ কেবল আনন্দদায়ক নয়, বরং একটি হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার একটি চমৎকার প্রচেষ্টা। শহুরে জীবনের কংক্রিট দেয়ালের ফাঁক গলে যখন এমন ঐতিহ্য ফিরে আসে, তখন সমাজও যেন একটু দম নেয়, একটু স্বপ্ন দেখে।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।