সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, উত্তাল বেলগ্রেড
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ সার্বিয়ায় প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচের ১২ বছরের শাসনের অবসান এবং আগাম নির্বাচনের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। শনিবার (২৮ জুন) রাজধানী বেলগ্রেডে এই সরকারবিরোধী আন্দোলন চরমে পৌঁছায়, যখন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ।
বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় এই বিক্ষোভে অংশ নেয় প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ‘আমরা নির্বাচন চাই’— এমন দাবিতে মুখর জনতা সরকারের প্রতি ক্ষোভ জানায়। ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত এই আন্দোলন ভুচিচ সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে। সংঘর্ষে আহত হন অনেকেই, গ্রেপ্তার করা হয় অসংখ্য আন্দোলনকারীকে।
এর জবাবে প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচ এক ইনস্টাগ্রাম বার্তায় দাবি করেন, এই বিক্ষোভ ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ’, যার লক্ষ্য সার্বিয়ার স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা। তিনি বলেন, ‘তারা সার্বিয়াকে উৎখাত করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
এর আগে, বেলগ্রেডের হাই কোর্ট জানিয়েছিল, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।
ভুচিচের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে। সে বছরই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিরোধীদের দাবির মুখে আগাম নির্বাচনে যেতে রাজি নন তিনি। বর্তমানে তার দল ‘সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টি’ এবং মিত্রদের দখলে রয়েছে সংসদের ২৫০ আসনের মধ্যে ১৫৬টি।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩৭ বছর বয়সী স্লাজানা লোজনোভিচ উত্তরের শিদ শহর থেকে এসে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো দখলে চলে গেছে, দুর্নীতি চরমে। শান্তিপূর্ণভাবে ভুচিচ ক্ষমতা ছাড়বেন বলে মনে হয় না। নির্বাচনই একমাত্র সমাধান।’
বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, ভুচিচ প্রশাসন সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করে। তবে ক্ষমতাসীন দল এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।
ভুচিচের রাশিয়া ঘনিষ্ঠ নীতিও সমালোচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা সার্বিয়া ইউক্রেইনে রুশ আগ্রাসনের পরও পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা মানেনি।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর নভি সাদ শহরের রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জনের মৃত্যুর পর থেকেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় দুর্নীতিকেই দায়ী করে রাজপথে নামে ছাত্র, রাজনীতিক, শ্রমিক ও কৃষকরা। এরই জেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিস।
শনিবারের বিক্ষোভ শেষে আয়োজকরা এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘সরকার চাইলে সংঘর্ষ এড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা সেই পথ না বেছে জনগণের ওপর দমন-পীড়নের পথ নিয়েছে। পরিস্থিতি আরও চরমে গেলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ তারা সার্বিয় নাগরিকদের ‘নিজের স্বাধীনতা নিজ হাতে তুলে নিতে’ আহ্বান জানান এবং জানান, আন্দোলনের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।