ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় বিপুলসংখ্যক চালক
লাইসেন্সের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় রয়েছে বিপুলসংখ্যক চালক। প্রাতিষ্ঠানিক সব প্রক্রিয়া অনুসরণ ও পরীক্ষায় পাস করে ৭ লাখ ৩ হাজার সেবাগ্রহীতা মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মূলত হঠাৎ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি ও সরবরাহ প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ায় চালকরা এমন বিপাকে পড়েছে। এর ফলে তারা পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছে। পুলিশ ই-লাইসেন্স দেখতে আগ্রহী নয়। এর জেরে মামলাও করছে পুলিশ। ড্রাইভিং লাইসেন্স এমনিতেই সহজে পাওয়া যায় না। বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা চালকদের পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগও পুরনো। সব মিলিয়ে চালকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ভুক্তভোগী এবং বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্মার্ট ড্রাইভিং কার্ড সরবরাহে বিআরটিএ বিগত ২০২০ সালে এক ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তির দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ২৪ লাখ কার্ড সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১৬ লাখের মতো কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। পরের দুই বছরে ১৬ লাখ কার্ড সরবরাহ করেছে। সব মিলিয়ে চুক্তির দিন প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরে ৪০ লাখ কার্ড প্রিন্ট করে সরবরাহ করার কথা ছিল। সেজন্য বিআরটিএর সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার চুক্তি হয়। কিন্তু এ পর্যন— প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ২৮ লাখ কার্ড সরবরাহ করেছে। বাকি কার্ড সরবরাহের জন্য মাত্র এক মাস সময় আছে। অথচ এখন পর্যন্ত জমা পড়ে আছে ৭ লক্ষাধিক নতুন আবেদন। ফলে কঠিন হয়ে পড়ছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পুরোনো জট কমানো।
সূত্র জানায়, করোনার কারণে বিগত ২০২০ ও ২০২১ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড আমদানি সংকটে পড়ে। তারপর মাঝে মধ্যে কিছু কার্ড নিয়ে এসে ছাপানো হয়েছে। কিন্তু ২০২৩-২৪ সালে ডলার সংকট তীব্র হলে আর এলসি খোলা সম্ভব হয়নি। এতেও স্মার্ট কার্ড আটকে যায় এবং কার্ডের জট শুরু হয়। যদিও স্মার্ট কার্ড বিতরণী প্রতিষ্ঠানের দাবি, এ বছরের শুরুতে সাড়ে ৩ লাখ কার্ড ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু বিআরটিএ সেগুলোকে প্রিন্ট করতে অনুমোদন দিচ্ছে না। আর বিআরটিএ বলছে, কার্ডের মান খারাপ থাকায় সংস্থাটি প্রিন্টের জন্য অনুমোদন দিচ্ছে না। তাছাড়া নতুন করে এমএসপির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদও বাড়াবে না। এ আগস্ট থেকে দেশীয় কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) স্মার্ট কার্ড প্রিন্টের জন্য অনুমোদন দিতে পারে বলে জানা যায়।
সূত্র আরো জানায়, ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড বিআরটিএ গত মার্চ থেকে বিতরণ করছে না। এ কারণে প্রতিদিনই স্মার্ট কাডের জট বাড়ছে। তবে ইমারজেন্সি ও বিদেশ গমনিচ্ছুকদের জন্য স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে টিকিট, ভিসাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংস্থাটিকে দেখাতে হয়। তবে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের মতে, ড্রাইভিং লাইসেন্স না পেলেও যে কেউ চাইলে অস্থায়ী ভিত্তিতে একটা অনুমোদনপত্র দেয়া হচ্ছে। যেটা কাছে থাকলে সব জায়গায় বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সের সুবিধা পাওয়া যাবে। মামলাও করতে পারবে না।
এদিকে এ বিষয়ে কার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী আমরা কার্ড বিতরণ করা যায়নি। কারণ ২০২৩-২৪ সালের দিকে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া করোনার কারণেও সমস্যা হয়েছিল। সে কারণে তিন বছরে ২৪ লাখের জায়গায় ১৬ লাখ কার্ড বিতরণে সক্ষম হয়। সর্বশেষ সাড়ে ৩ লাখ কার্ড আনা হয়েছে। কিন্তু বিআরটিএ প্রিন্টের জন্য অনুমোদন দিচ্ছে না।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিআরটিএ পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) সীতাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, এমএসপি বিআরটিএ চাহিদা অনুযায়ী কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি। সেজন্য সংকট তৈরি হয়েছে। তাছাড়া কিছু কার্ডের মান খারাপ থাকায় তা প্রিন্ট করতে দেয়া হয়নি। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ই-লাইসেন্স ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। ই-লাইসেন্স থাকলে পুলিশ হয়রানি করার কথা নয়। তারপরও কেউ যদি হয় বিআরটিএ পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবে। আর স্মার্ট কার্ডের সংখ্যা বাড়লেও নতুন কোম্পানি চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দ্রুতই সেটা প্রিন্টের ব্যবস্থা করা হবে। আশা করা যায় আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।