রাজারহাটের চরের নারীরা জানেন না স্যানিটারী ন্যাপকিন কি
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের বেশীরভাগ নারী ও কিশোরী পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না। এমনকি স্যানিটারি ন্যাপকিন কি সে বিষয়েও জানেন না তাঁরা। আবার অনেকে বিষয়টি জানলেও দাম বেশি হওয়ায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না।
এ ছাড়া দোকানে ন্যাপকিন চাইতে গেলে উত্ত্যক্ত হওয়ার ভয়, অভিভাবকের কাছে বলতে লজ্জা ও সংকোচ এবং অন্যান্য কারণেও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না অনেকে। এ কারণে দূর্যোগকালীন বন্যার সময় সবচেয়ে বেশী বিপদাপন্ন হয়ে পড়েন তাঁরা। অনেক নারী জানান, বন্যা ও অতিবৃষ্টির সময় চরে কারো পিরিয়ড শুরু হলে শুকনা কাপড় পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে ভিজে কাপড়ও ব্যবহার করে থাকে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ, পাড়া মৌলা, বিদ্যানন্দের চর সহ প্রায় ৫টি চরের নারী ও কিশোরীদের ওপর সরেজমিনে এ তথ্য জানা যায়। ওই এলাকার বেশীর ভাগ নারী ও কিশোরী পিরিয়ডের সময় পুরাতন সুতি কাপড় ব্যবহার করেন। যেগুলো প্রায় অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন। এসব অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার করায় অনেক নারী বা কিশোরীর গোপনাঙ্গে টিউমার, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগব্যাধিতে ভুগতে হয়। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা।
তিস্তা নদীর চরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫৭ জন কিশোরী ও নারীর ওপর জরিপ করেন। এতে দেখা যায়, ৭ জন নিয়মিত স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন। ২০ জন নারী তাঁরা অনিয়মিতভাবে অর্থাৎ কখনো প্যাড, কখনো ন্যাপকিন এবং কখনো পুরোনো কাপড় ব্যবহার করেন। বাকি ৩০ জন নারী ব্যবহার করেন পুরোনো কাপড়। তাঁদের মধ্যে ৪০ জন প্যাডের বেশী দামের জন্য এর ব্যবহারকে অপচয় মনে করেন। বাকি ১৭ জন স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার না করলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে, তা তাঁরা জানেন না।
বুড়িরহাট আব্দুস সামাদ মন্ডল দাখিল মাদরাসার ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া অচিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার পরিবার থেকে আমাকে পুরোনো কাপড় ব্যবহার করতে শেখানো হয়েছে। আমাদের স্কুলেও কেউ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করার কথা বলেনি।’
খিতাব খাঁ চরের জাহানারা বলেন, ‘কষ্ট করে যে ট্যাকা কামাই করি তাকে দিয়ে সংসারের খরচই চলে না, এতো ট্যাকা দিয়ে আবার প্যাড কিনমো ক্যামনে?’
একই গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মোর আম্মা সারাজীবন পুরোনো ছেঁড়া কাপড় ব্যবহার করছে, মুইও করং, এখন খালি খালি প্যাড কিনে ক্যা ট্যাকা নষ্ট করিম।’
বুড়িরহাট আব্দুস সামাদ মন্ডল দাখিল মাদরাসার ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও রামহরি গ্রামের জাকিয়া জেমি বলেন, ‘আমি নিয়মিত প্যাড ব্যবহার করি। ব্যবহারের পর মাটিতে পুঁতে ফেলি।’
লাইট হাউজ বেসরকারি সংস্থার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর অঞ্জলী রানী বলেন, দূর্যোগকালীন সময়ে নারী ও কিশোরীরা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে থাকে। আর এ সময় পিরিয়ড শুরু হলে তারা লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে চায় না। তাই আমরা চরের নারী ও কিশোরীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। এতে করে নারী ও কিশোরীরা সচেতন হয়ে স্বাস্থ্য সম্মত নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত পদ্ধতি গ্রহন করতে সক্ষম হচ্ছে।
রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. গোলাম রসুল রাখী বলেন, ‘পিরিয়ডে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে প্রস্রাবে ইনফেকশন হতে পারে। এ ছাড়া জরায়ুর মুখে নানা রকম ইনফেকশন হয় এবং তাতে বন্ধ্যাত্বের আশঙ্কাও থাকে। তবে দূর্গম চরে আমাদের স্বাস্থ্য সেবীরা এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছে।’
রাজারহাট উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জয়ন্তী রানী বলেন, মহিলা অধিদপ্তরের আওতায় রাজারহাট উপজেলায় ৭ টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব রয়েছে। এখানে গান, আবৃত্তি, জেন্ডার ইস্যুর পাশাপাশি বিষয়েও সচেতন করা হচ্ছে।
উপজেলা দূর্যোগ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কিন্তু লাইট হাউজ এনজিও এ বিষয়ে কাজ করছে। এখন থেকে দূর্যোগকালীন সময়ে ত্রান সামগ্রীর পাশাপাশি নারীদের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করা হবে।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।