Loading Now

সরকারের নানা পদক্ষেপেও বিদেশী বিনিয়োগে ধস

সরকারের নানা পদক্ষেপেও বিদেশী বিনিয়োগে ধস নেমেছে। বরং গত ২০২৪ সালে বাংলাদেশে আগের বছরের তুলনায় বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি। ২০২৪ সালে প্রায় ১৭ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকেই ব্যবসায়ের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দুর্নীতিসহ অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অদক্ষ আমলাতন্ত্র, উচ্চ করহারসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৭টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেন ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় বিনিয়োগ করতে তারা ভয় পাচ্ছেন। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আংকটাড) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে এফডিআই এসেছে মাত্র ১২৭ কোটি (১.২৭ বিলিয়ন) ডলার বা ১৫ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। সরকারি হিসাবে যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এফডিআই বাড়াতে সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও সমপর্যায়ের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। যা দেশের জন্য উদ্বেগজনক। উদ্যোক্তা ও ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছে না। পাশাপাশি ব্যবসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অভাব, সেবাপ্রাপ্তিতে ভোগান্তি, জ্বালানিসংকট, ডলারসংকট, অর্থপাচার ও দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো মূল কারণেও কমছে বিদেশি বিনিয়োগ। তাছাড়া সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অগ্রগতির ওপর বিনিয়োগ নির্ভর করে। বিশেষ করে বিনিময় হার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাংকব্যবস্থা, বন্দরের সক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ বাজার ও বৈদেশিক বাণিজ্য পরিস্থিতি নাজুক হলে বাড়ে না বিনিয়োগ। মূলত দেশের রাজনৈতিক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ দেখেই উদ্যোক্তারা আসেন।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে করোনা মহামারীর মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭৭ কোটি ১০ লাখ (১.৭৭ বিলিয়ন) ডলারের নিট এফডিআই এসেছিল। আর তার আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) নিট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১২৭ কোটি ১০ লাখ (১.২৭ বিলিয়ন) ডলার। বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসে। ওই বছর বাংলাদেশ ২৬৩ কোটি (২.৬৩ বিলিয়ন) ডলারের নিট এফডিআই পেয়েছিল।

আর সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১০ মাসে এফডিআইয়ের নিট প্রবাহ ২৯ শতাংশ কমেছে। যদিও বিদেশি বিনিয়োগ টানতে সরকার কিছু ক্ষেত্রে করছাড়ের শর্ত শিথিল করেছে। এর ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) ও হাই-টেক পার্কে বিদেশে ব্যবহৃত হয়েছে এমন যন্ত্রপাতি এনে উৎপাদন কাজে ব্যবহার করলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা করছাড় বা অবকাশের সুবিধা পাবে। এই সুবিধা এত দিন ছিল না। তাছাড়া সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতে প্রণোদনা দেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।

সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা) যৌথভাবে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫ গত এপ্রিলে আয়োজন করে। ওই সামিটে ৫০টি দেশের ৪১৫ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেয়া এবং দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে জানানো হয়।

এদিকে বিদেশী বিনিয়োগ প্রসঙ্গে দেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। একদিকে ব্যাংকগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, আরেক দিকে যদি কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হয় তাহলে অস্থিরতা সৃষ্টি হবেই। আর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি ঠিক না হয় তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো অসম্ভব। তাতে নতুন হবেই না বিনিয়োগ।

অন্যদিকে এ বিষয়ে ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই—ফিকি) সভাপতি এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এমডি জাভেদ আখতার জানান, একজন বিনিয়োগকারী তখনই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন, যখন তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোর ওপর ভরসা পান। বিনিয়োগের পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব হয়। বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ কখনোই ভালো ছিল না। এর অন্যতম কারণ দেশের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার বিশ্বাসযোগ্যতা, রাষ্ট্রের বিনিয়োগনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাব। তার ওপর গত কয়েক বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেনি।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।