শুক্রবার

১৮ জুলাই, ২০২৫

৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২২ মুহররম, ১৪৪৭

জুনে সড়ক-রেল-নৌপথে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৭৮০ জনের, আহত প্রায় দুই হাজার

জুনে সড়ক-রেল-নৌপথে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৭৮০ জনের, আহত প্রায় দুই হাজার

বাংলাদেশে চলতি বছরের জুন মাসটি সড়ক, রেল ও নৌপথে ভয়াবহ দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির এক করুণ চিত্র এঁকে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওই মাসে দেশে মোট ৭৪৩টি দুর্ঘটনায় ৭৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে এক হাজার ৯১৬ জন।

সংগঠনটি জানায়, জুন মাসজুড়ে দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক এবং অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক, রেল এবং নৌ দুর্ঘটনার সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু সড়কপথেই ঘটেছে ৬৭১টি দুর্ঘটনা, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭১১ জন এবং আহত হয়েছেন এক হাজার ৯০২ জন। সড়ক দুর্ঘটনার শিকারদের মধ্যে ২৪৪ জনই ছিলেন মোটরসাইকেল আরোহী, যা জুন মাসের দুর্ঘটনার মধ্যে সর্বাধিক প্রাণহানির খাতাটি দখল করে নিয়েছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২২৪টি, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। নিহতের ক্ষেত্রে এর হার ৩৪ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং আহতের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ।

জুন মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। সেখানে ১৬০টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৭২ জনের এবং আহত হয়েছে ৫৮৮ জন। এর বিপরীতে সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট বিভাগে, যেখানে ২৫টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৪৫ জন।

রেলপথে জুন মাসে ৫৪টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬ জন এবং আহত হয়েছেন ১৪ জন। নৌপথেও কম ছিল না দুর্ঘটনার মিছিল। ওই মাসে ১৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৩ জনের।

সড়ক দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪১ দশমিক ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছে গাড়ি চাপার কারণে। ২৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে মুখোমুখি সংঘর্ষে, ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ ক্ষেত্রে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়েছে। এছাড়া ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন কারণে, ওড়না চাকায় পেঁচিয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ট্রেন ও যানবাহনের সংঘর্ষে।

গণপরিবহন ও যানবাহনের ধরণ অনুযায়ী দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি জড়িত ছিল মোটরসাইকেল, যার হার ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান ও লরি ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ, বাস ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, সিএনজি অটোরিকশা ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং বাকি অংশে নছিমন-করিমন, কার ও মাইক্রোবাস প্রভৃতি।

রাস্তাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৩১ দশমিক ১৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ ফিডার রোডে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি দুর্ঘটনার জন্য একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ, সড়কের ত্রুটি, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল এবং অবাধ যানবাহন চলাচল। দুর্ঘটনা রোধে তারা নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো, সড়ক আলোকসজ্জা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ, ফিটনেসবিহীন যানবাহন অপসারণ এবং পরিবহন খাতের ডিজিটাল নজরদারি জোরদারের সুপারিশ করেছে।

সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।”

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।