জয়পুরহাটে হিমাগারের বাড়তি ভাড়ার চাপে বিপাকে চাষি-ব্যবসায়ীরা

জয়পুরহাটে হিমাগারের বাড়তি ভাড়ার চাপে বিপাকে চাষি-ব্যবসায়ীরা

13 July, 2025 | সময়: 5:44 pm

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় চলতি মৌসুমে আলু চাষ নিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। উৎপাদিত আলুর দাম কমে যাওয়া, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং হিমাগারে সংরক্ষণের ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি—এই তিন দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। মৌসুমের শুরুতে বাজারে সঠিক দাম না পেয়ে অনেকে আলু হিমাগারে মজুদ করেছিলেন ভবিষ্যতে লাভের আশায়, কিন্তু বর্তমানে আলু উত্তোলনের সময় এসে হিমাগারের বাড়তি ভাড়ার কারণে নতুন সংকটে পড়েছেন তারা।

চাষিদের অভিযোগ, হিমাগার মালিকরা একতরফাভাবে প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন।
গত বছর যেখানে ৬৫ কেজির বস্তার ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা, এবার তা বাড়িয়ে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যদিও কেজিপ্রতি ভাড়া কিছুটা কমিয়ে ৬.৭৫ টাকা করা হয়েছে, তবুও বস্তাপ্রতি অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

অতিরিক্ত উৎপাদন ও রপ্তানির হার কমে যাওয়ায় আলুর দাম ব্যাপকভাবে পড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর ফলে প্রতি কেজি আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ২৭ টাকার বেশি পড়লেও বিক্রির সময় মিলছে কেজিপ্রতি ১১-১২ টাকা। এতে করে প্রতি বস্তায় গড় লোকসান দাঁড়াচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩০০ টাকা।

এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে চাষি ও ব্যবসায়ীরা টানা এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। প্রশাসনের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করলেও হিমাগার মালিকরা ভাড়া কমানোর কোনো উদ্যোগ নেননি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার আলোচনার পরও কোনো ফল আসেনি।

কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান জানিয়েছেন, হিমাগার মালিকরা ৩৭০ টাকা ভাড়া নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তারা এখনও ৪০০ থেকে ৪২০ টাকাই নিচ্ছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে রপ্তানির ক্ষেত্রেও হতাশা কাজ করছে। শ্রীলংকার হংফং কোম্পানির প্রতিনিধি আব্দুল বাসেদ জানিয়েছেন, সরকারের প্রণোদনা কমে যাওয়ায় রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাড়তি আলু বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, কেজিপ্রতি এক-দেড় টাকা ভাড়া কমালেই কৃষকেরা কিছুটা রেহাই পেতেন। তিনি মনে করেন, এই আর্থিক ক্ষতি শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৃষকদের মানসিক ও সামাজিক জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলছে।

হিমাগার মালিকদের পক্ষ থেকে অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা দাবি করছেন, বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এম আসাদুজ্জামান সরকার মনে করেন, কৃষি খাতে পরিকল্পনার অভাব এবং বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা কৃষকদের এমন সংকটে ফেলছে। তাঁর মতে, কৃষি উৎপাদনে সরকারের উচিত অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা ও সরবরাহ বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, নইলে কৃষকরা ধীরে ধীরে আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।