রবিবার

২০ জুলাই, ২০২৫

৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২৪ মুহররম, ১৪৪৭

প্রতি বছরই সরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে

প্রতি বছরই সরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে

প্রতি বছরই সরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। মূলত রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না থাকায় সরকারের ঋণ নির্ভরতা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলতিহ ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে ওই ঋণের পরিমাণ গিয়ে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। আর তার বেশির ভাগই দেশীয় উৎস থেকে নেয়া। পাশাপাশি ক্রমেই বাড়ছে বৈদেশিক ঋণের অংশও। ফলে সব মিলিয়ে অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও বাড়ছে ঋণ ব্যবস্থাপনায় সংকট। অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের রাজস্ব আদায়ের হার কম হওয়ায় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সামনে উচ্চ সুদে ঋণ নেয়ার সময় আসছে। চলতি অর্থবছরের শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৩ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে দেশি ঋণের পরিমাণ ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৮০০ কোটি এবং বিদেশি ঋণ ১০ লাখ ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আগামী দুই অর্থবছরে ওই ঋণের পরিমাণ বাড়বে আরো প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা। ফলে ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে তা ২৬ লাখ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছর শেষে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা হবে। বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের জন্য শুরুতে অনুমান করা হয়েছিল ২২ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তা সংশোধন করে নামিয়ে এনেছে ২১ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকায়।

সূত্র জানায়, বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২০২ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেড়ে হবে ২৬১ কোটি ডলার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২৯০ কোটি ডলার, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৩১২ কোটি ডলার, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে হবে ৩৩৪ কোটি ডলার। সুদসহ ওই ব্যয় আরো অনেক বেশি হবে। সেজন্যই সরকারের মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলে ঋণের পরিমাণ ও বৈদেশিক দায়ের কারণে বাংলাদেশ এখন মাঝারি ঝুঁকির পর্যায়ে অবস্থান করার কথা বলা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ বলা হলেও রাজস্ব সংগ্রহে দুর্বলতা এবং বৈদেশিক পরিশোধের চাপে তা দ্রুত বাড়ছে। মূলত বিশেষ উদ্বেগের জায়গা বৈদেশিক ঋণ বনাম রপ্তানির অনুপাত। এখন ওই অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১৪০ শতাংশে, যা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, ঋণঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদে কে এখনো নিরাপদ বলেই ধরা হয়। তবে ঋণের গতি ও পরিশোধ সক্ষমতা বিবেচনায় ওই ধারা অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হলে এবং রপ্তানির প্রবৃদ্ধি স্থবির হলে ঋণ ব্যবস্থাপনায় চাপ আরো বাড়বে। তাই ঋণ ব্যবস্থাপনার ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে আগামী সরকারের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ। সেজন্য এখনই রাজস্ব বাড়ানো, অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যয় এবং দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োজন। না হলে উন্নয়ন অভিযাত্রা ঋণের ভারেই থমকে যেতে পারে।

এদিকে এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ বলছে, ঋণের পরিমাণ বাড়লেও তা এখনো সহনীয় সীমায় রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এখনই রাজস্ব-জিডিপির হার ৮ শতাংশের ঘরে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অনেক সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ। তখন উচ্চ সুদে, স্বল্প সময়ের ঋণ নিতে হবে।

অন্যদিকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া চাপ কমাতে ঋণ ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ছিল ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল বাজেটে তা বেড়ে হয় ৩৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে বর্তমান সরকার তা সংশোধন করে ৩৭ দশমিক ৪১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আগামী অর্থবছরগুলোতে এই অনুপাত আরো বাড়বে। যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩৭.৫০%, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৩৭.৬৩%, ২০২৭-২৮ অর্থবছরে হবে ৩৭.৭২% হবে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা জিডিপি দাঁড়াবে।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।