রবিবার

১৯ জুলাই, ২০২৫

৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২৩ মুহররম, ১৪৪৭

সরকারের নজরদারির অভাবে চালের দাম বাড়িয়েই চলেছে অসাধু চক্র

সরকারের নজরদারির অভাবে চালের দাম বাড়িয়েই চলেছে অসাধু চক্র

সরকারের নজরদারির অভাবে চালের দাম বাড়িয়েই চলেছে অসাধু চক্র। দেশে চালের কোনো ঘাটতি না থাকলেও নানা অজুহাতে বাড়ছে চালের দাম। অথচ গত এক বছরে ১৩ লাখ মেট্রিক টনের মতো চাল দেশে আমদানি হয়েছে। তাছাড়া গত বোরো মৌসুমে ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু তারপরও চালের দাম না কমে বরং বাড়ছে। টিসিবি হিসাবে বাজারে মোটা চালের সর্বনিম্ন দর উঠেছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৫০ টাকা। আর মাঝারি চালের কেজি ৬০-৬৫ টাকা। সরু চাল কিনতে লাগছে প্রতি কেজি ৭৫-৮৫ টাকা।দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে। এ বছর দেশে রেকর্ড পরিমাণ বোরো ধান উৎপাদন হলেও কৃষক ও ভোক্তা কেউই এর সুফল পাচ্ছে না। বোরোর উৎপাদনের সঙ্গে বাজার পরিস্থিতির মিল নাই। বোরোর ভরা মৌসুমেও আড়ত থেকে শুরু করে খুচরা বাজার পর্যন— সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। চাল আমদানি ও অভ্যন্তরীণ ফলন ভালো হলেও সরকার বাজারে চালের বাড়তি দর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। চালের বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কৃষকের হাতে বা গোলায় যখন ধান থাকে তখন বাজারে ধানের দাম। মিলারদের কারসাজির মাধ্যমে বাজারে ধানের দাম কমিয়ে রাখে। আর যখনই ওই ধান ব্যবসায়ীদের হাতে যাওয়ার পরই বাড়িয়ে দেয়া হয় চালের দাম। সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে এ বিষয়টি ব্যর্থ হচ্ছে। ক্যাবের হিসাবে গত এক বছরে বাজারে চালের দাম গড়ে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। তার মধ্যে গত এক মাসে চিকন চালের দাম ৫ শতাংশ, আর মাঝারি ও মোটা চালের দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে। মূলত মিলাররা কারসাজি করে চালের মোকামগুলোয় চালের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে অভিযোগ উঠেছে। বোরো মৌসুমে দেশের মোট চালের প্রায় ৫৫ শতাংশ উৎপাদন হয়। ফলন ভালো হলে সরবরাহ বাড়ে আর বাজারে দাম কমে। এ বছর বোরোতে রেকর্ড ২ কোটি ১৪ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। আর ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশে বোরোর উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৯৫ লাখ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৩ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ৫ লাখ টন। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছর বোরোর উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন।

সূত্র জানায়, টিসিবির তথ্যানুযায়ী গত এক মাসের ব্যবধানে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, পাইজাম ও লতার দাম ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ইরি ও স্বর্ণার দাম ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে। যদিও বাজারে চালের দাম আরও বেশি বেড়েছে। আর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, বর্তমানে বাজারে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। পাশাপাশি সরকারের গুদামেও যথেষ্ট পরিমাণে চাল মজুত আছে। চলতি অর্থবছরের শুরুতে সরকারের গুদামে ১৭ দশমিক ৬৪ লাখ মেট্রিক টন চাল ও গমের মজুত রয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ টন বেশি। কিন্তু এখন অটো রাইচ মিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে দেশের ধান, চালের বাজার। তারা বাজার থেকে প্রতিযোগিতা করে ধান কেনায় ধানের বাজার বাড়তি। যদিও প্রতিযোগিতা করে কেউ ধান কেনায় কৃষকদের লাভবান হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয় না। কোরবানির ঈদের পর প্রতি বস্তা চালের দাম সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের আগের তুলনায় বর্তমানে প্রতিকেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা চাপের মুখে পড়েছে। তবে চালের বাজারে অস্থিরতা নিরসনে সরকার কিছু উদ্যোগ নিলেও ফল এখনো দৃশ্যমান নয়। বরং প্রতিনিয়তই চালের দাম বাড়ছে।

সূত্র আরো জানায়, গত আগস্টে বন্যায় দেশে আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন সরকার শুল্ক কমানো ও ১০ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। তার মধ্যে সরকারিভাবে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন আর বেসরকারি আমদানিকারকেরা প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টন চাল এসেছে। একই সময়ে ৬২ লাখ টন গমও আমদানি হয়েছে। এখন সরকারের কাছে খাদ্যশস্য মজুত আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। যা সন্তোষজনক বলে গণ্য করা হয়। এর মধ্যে ১৫ লাখ টনের বেশি চাল। সাধারণত মে মাস পর্যন্ত বোরো মৌসুম ধরা হয়। কিন্তু এবার জুনেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। অথচ বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে। যদিও বাংলাদেশে চাল আমদানি সাধারণত নিষিদ্ধ থাকে। সরকার বিশেষ অনুমতি দিয়ে চাল আমদানি করা হয়।তবে বিশেষ অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং শুল্কছাড়ের মেয়াদও শেষ। যে কারণে এখন আর চাল আমদানি হচ্ছে না। ওই সুযোগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। চাল আমদানিতে মোট শুল্ক-কর এখন সাড়ে ৬৭ শতাংশ।

এদিকে চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির জানান, সবই মিলারদের সাজানো কারসাজি। তারাই চালের বাজারকে নিজেদের সুবিধামতো অস্থির করে তোলে। কৃষকের হাতে যখন ফসল থাকে তখন দাম কমিয়ে রাখা হয়। তাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার যখন কৃষকের হাত থেকে পণ্য চলে যায় তখন দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে ক্ষতির মুখে ফেলা হয়। সরকার এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, চাল আমদানি ও অভ্যন্তরীণ ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম বাড়তি। সরকার চালের বাড়তি দর নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। গত বছরের তুলনায় এবার বোরো উৎপাদন ১৫ লাখ টন বেশি হয়েছে। তবু বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা অত্যরু জরুরি। মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে কৃষকের ফসল রক্ষায় এবার সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনার নির্ধারিত সময় ১৫ দিন এগিয়ে এনেছে। তবে দুর্নীতি রোধ করা গেলে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।