মঙ্গলবার

২২ জুলাই, ২০২৫

৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২৬ মুহররম, ১৪৪৭

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা

আদালতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখোমুখি হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। বস্টনের এক আদালতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করতে দেখা গেছে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ডের বিভিন্ন শিক্ষা কর্মসূচির জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা) সরকারি অর্থ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সোমবার অনুষ্ঠিত শুনানিতে মামলার দায়িত্বে থাকা বিচারক অ্যালিসন বুরোস এই পদক্ষেপ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘চিকিৎসা গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বন্ধ করে কীভাবে বৈষম্য বা ইহুদিবিরোধিতা বন্ধ করা সম্ভব?’ একপর্যায়ে তিনি সরকারের যুক্তিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, হার্ভার্ডে ইহুদিবিরোধী আচরণের জন্য এ সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয় এবং যথার্থ।

অন্যদিকে হার্ভার্ডের পক্ষে আইনজীবী স্টিভেন লেহোস্কি বলেন, ‘প্রশাসন মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই গবেষণা বন্ধ হলে রোগী, জনসাধারণ এবং দেশের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ হার্ভার্ডের যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে গবেষণামূলক সম্পর্ক রয়েছে আট দশকেরও বেশি সময় ধরে।

হার্ভার্ডের দাবি, সরকার যেভাবে বরাদ্দ বন্ধ করছে, তাতে কোনও প্রমাণ নেই যে এর মাধ্যমে ইহুদিবিরোধিতা কমবে। গবেষণাগুলোর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা, মহাকাশ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক প্রকল্প। সরকারের পক্ষে আইনজীবী মাইকেল ভেলচিক (যিনি নিজেও হার্ভার্ড থেকে পাস করেছেন) দাবি করেন, হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সই করা এক নির্বাহী আদেশ লঙ্ঘন করেছে, যা ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় গৃহীত হয়।


তার ভাষায়, ‘হার্ভার্ড শুধু টাকার জন্যই এই মামলায় জড়িয়েছে।’


তিনি বলেন, ‘হার্ভার্ড ক্যানসার গবেষণার চেয়ে ক্যাম্পাস বিক্ষোভকারীদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।’ বিচারক বুরোস জানতে চান, প্রশাসন কীভাবে বুঝল যে হার্ভার্ড ইহুদিবিরোধিতা রুখতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত কোনও লিখিত প্রক্রিয়া বা প্রমাণ নেই।

তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের কি প্রতিটি গবেষককে ইহুদিবিরোধী প্রমাণ করতে হবে না? নাকি শুধু বলে দিলেই হবে – হার্ভার্ড ইহুদিবিরোধী?’ তিন ঘণ্টাব্যাপী শুনানির পর বিচারক তৎক্ষণাৎ কোনো রায় দেননি, তবে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান।

এই মামলার রায় আপিলে যেতে পারে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে। একইসঙ্গে, ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত ভিসা প্রোগ্রাম থেকেও বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগেও বিচারক বুরোস এই ভিসা সংক্রান্ত অন্য একটি মামলায় হার্ভার্ডের পক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্প ট্রুথ স্যোশালে-এ দেওয়া এক পোস্টে বিচারক বুরোসকে ‘সম্পূর্ণ বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেবেন, কিন্তু ‘আমরা আপিল করে জিতব।’ শুনানির সময় আদালতের বাইরে বিক্ষোভকারীরা ‘একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষা করো’, ‘হার্ভার্ডের ওপর হাত দিও না’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন।

হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে হার্ভার্ড অবশেষে প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করবে এবং ভালোভাবে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে একটি চুক্তি সম্ভব।’ এটি ট্রাম্প প্রশাসনের বড় একটি প্রচেষ্টা – যেখানে তারা প্রভাবশালী আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।

সম্প্রতি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ হার্ভার্ডকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য দিতে সাবপোনা পাঠিয়েছে এবং ট্রাম্প বলেছেন, হার্ভার্ডের করমুক্ত সুবিধাও বাতিল করা হতে পারে। অন্যদিকে, নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কিছু প্রশাসনিক দাবি মেনে নেওয়ার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় হুমকি দিয়েছে, তাদের স্বীকৃতি বাতিল করা হতে পারে।

সূত্র : ‍ বিবিসি

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।