স্কুলে স্মার্ট ডিভাইস নিষিদ্ধে আইন করল দক্ষিণ কোরিয়া

স্কুলে স্মার্ট ডিভাইস নিষিদ্ধে আইন করল দক্ষিণ কোরিয়া

27 August, 2025 | সময়: 8:34 pm

দক্ষিণ কোরিয়া স্কুলে ক্লাস চলাকালে মোবাইল ফোন ও স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বুধবার একটি আইন পাস করেছে।

২০২৬ সালের মার্চে শুরু হওয়া পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন এ আইন কার্যকর হবে। স্মার্টফোন আসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বাড়তে থাকা গবেষণা ও উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের যৌথ উদ্যোগে আইনটি পাস হয়।

আইন প্রণেতা, অভিভাবক ও শিক্ষকরা যুক্তি দিচ্ছেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত ফলাফল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ও পড়াশোনার জন্য ব্যয় করা সময় নষ্ট হচ্ছে।

তবে আইনটির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। শিক্ষার্থীসহ সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলছেন, এটি কিভাবে বাস্তবায়িত হবে, এর ব্যাপক প্রভাব কী হতে পারে ও আসক্তির মূল সমস্যাটি আদৌ সমাধান করবে কি না।

১৬৩ জন সদস্যের মধ্যে ১১৫ ভোটে বুধবার দুপুরে সহজেই পাস হয় বিলটি।

দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকাংশ স্কুলেই ইতিমধ্যে স্মার্টফোনের ওপর কিছু ধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

অবশ্য স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়াই প্রথম নয়। ফিনল্যান্ড ও ফ্রান্সের মতো কিছু দেশ কেবল ছোট শিশুদের স্কুলে সীমিতভাবে ফোন নিষিদ্ধ করেছে। আবার ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও চীনের মতো দেশগুলো সব স্কুলে ফোন ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। তবে আইন আকারে এমন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি।
সিউলের ১৪ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর মা চোই ইউন-ইয়ং বলেন, ‘শিশুরা এখন আর স্মার্টফোন হাত থেকে নামাতেই পারে না।’

তবে শুধু শিশুরাই নয়। ২০২৪ সালের এক সরকারি জরিপ অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার ৫১ মিলিয়ন মানুষের প্রায় এক-চতুর্থাংশ ফোনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল। আর ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার দ্বিগুণেরও বেশি—৪৩ শতাংশ। এ ছাড়া এ সংখ্যা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।

এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি তরুণ স্বীকার করেছে, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও স্ক্রল করার ক্ষেত্রে সময় নিয়ন্ত্রণে সমস্যায় পড়ে। অভিভাবকরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে বাচ্চারা তাদের সময়ের অন্যান্য কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুই মেয়ের অভিভাবক কিম সান জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিং নিয়েও তিনি চিন্তিত—যেখানে ‘শিশুরা একে অপরকে অকল্পনীয় রকমের কটূক্তি করে।’

বিলটি উত্থাপন করা বিরোধী দল পিপল পাওয়ার পার্টির এমপি চো জুং-হুন বলেছেন, অন্য দেশগুলো এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ায় তিনিও উৎসাহিত হয়েছেন। তার মতে, ‘শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও মানসিক বৃদ্ধির ওপর স্মার্টফোন আসক্তির মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রমাণ রয়েছে।’

যদিও আইনটি শুধুমাত্র ক্লাস চলাকালে ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ও স্কুল প্রাঙ্গণেই শিক্ষার্থীদের ফোন ব্যবহার বন্ধ করতে শিক্ষকদের ক্ষমতা দিয়েছে। এ ছাড়া স্কুলগুলোকে শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ডিভাইসের সঠিক ব্যবহার শেখানোরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সহায়ক ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি থাকবে। শিক্ষামূলক কাজ বা জরুরি পরিস্থিতিতেও ফোন ব্যবহার করা যাবে।

শিক্ষকদের মধ্যেও এ আইন নিয়ে বিভক্ত মত রয়েছে। দেশের প্রধান দুটি শিক্ষক সংগঠনের মধ্যে কেবল রক্ষণশীল কোরিয়ান ফেডারেশন অব টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন বিলটির সমর্থন জানিয়েছে। তাদের মতে, ‘এটি শ্রেণীকক্ষে ফোন ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপের জন্য আরো শক্তিশালী আইনি ভিত্তি দেয়।’

অন্য সংগঠন কোরিয়ান টিচার্স অ্যান্ড এডুকেশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন বলেছে, আইনটির ব্যাপারে তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো অবস্থান নেই। তাদের কিছু সদস্যের মতে, আইনটি শিক্ষার্থীদের ফোন ব্যবহারের অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে।

উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক চো ইয়ং-সান মনে করেন এ আইন ফোনকে লক্ষ্য করছে, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সমস্যাকে নয়—যা হলো দেশের কুখ্যাত প্রতিযোগিতামূলক কলেজ ভর্তি পরীক্ষা। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে, শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারের বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কোনো জায়গা নেই, কেবল কাকাওটক বা ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মই ভরসা। আর স্কুলে তারা ক্রমাগত প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকে।’

কোরিয়ার শিশুরা স্কুলের প্রথম দিন থেকেই এ কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ১৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী বিবিসিকে জানিয়েছে, তার ফোনে আসক্ত হওয়ার মতো সময়ই নেই, কারণ স্কুল শেষে ব্যক্তিগত টিউশনি ও হোমওয়ার্কের কারণে সে প্রায় প্রতিদিন মাঝ রাত পর্যন্ত জেগে থাকে।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।