বড়াইগ্রামে জলাবদ্ধতায় ২০০ পরিবার পানিবন্দী, দুর্ভোগ চরমে

বড়াইগ্রামে জলাবদ্ধতায় ২০০ পরিবার পানিবন্দী, দুর্ভোগ চরমে
নাটোরের বড়াইগ্রামের রোলভা গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমন দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। এসব বাড়ির উঠানে, ঘরের মেঝে পানিতে ডুবে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
জানা যায়, বছর খানেক আগে রোলভা গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার সময় পানি নিষ্কাশনের জন্য দেওয়া চারটি চোঙ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এসব স্থানে কোনো কালভার্টও দেওয়া হয়নি। ফলে এ বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে গ্রামের প্রায় সব পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে কমপক্ষে দুই শ’ বাড়ির ঘরের ভেতরে বা উঠানে পানি।
চুলা ও টিউবওয়েল পানির নিচে। রান্না খাওয়া তো বন্ধই, নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থাও। প্রায় সব বাড়ির টয়লেটও পানির নীচে। নোংরা পানিতে চলাচল করায় অনেকেই নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাড়িঘরে বসবাসের পরিবেশ না থাকায় শতাধিক শিক্ষার্থীর স্কুল-মাদরাসায় যাওয়াসহ পড়াশুনা বন্ধ। প্রায় মাস খানেক ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের প্রায় পুরোটাই জলাবদ্ধ। অধিকাংশ বাড়ির উঠানে, ঘরের মেঝেতে পানি। ঘরগুলো বসবাসের অযোগ্য। অনেকের ঘরও ভেঙ্গে পড়ছে। রাস্তায় বেঁধে রাখা গবাদি পশুগুলো কখনও বৃষ্টিতে ভিজছে, কখনও রোদে পুড়ছে। গ্রামের কমপক্ষে ৩০টি বাড়িতে কোনো লোকজন নেই।
অন্য বাড়িগুলোরও মহিলারা চলে গেছেন বাবা বা স্বজনদের বাড়িতে। এসব বাড়ির পুরুষেরা ঘরে থাকার পরিবেশ না থাকায় রাস্তায় বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। গ্রামের কবরস্থানও এক হাঁটু পানির নীচে। পানের বরজ, কলা, পেঁপে ও লেবুর বাগানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাঁঠালসহ বিভিন্ন জাতের ফলদ গাছগুলোও মরে যাচ্ছে।
এ সময় ওই গ্রামের বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম ‘প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে ঘরের মেঝে ও উঠানে পানি। বাধ্য হয়ে মা চলে গেছেন নানার বাড়িতে, আব্বা অন্য জেলায় গিয়ে কাজ করছেন। আমি সারা দিন বাজারে ঘুরে সময় কাটাই। চুলা ডুবে যাওয়ায় রান্না-বান্না একেবারে বন্ধ। কখনও মুড়ি, কখনও চা বিস্কুট খেয়েই দিন কাটছে।
আব্দুর রহমান বলেন, ঘরের চারদিকে তো আছেই, ঘরের মেঝেতেও পানি, উঠানেও পানি। বিষাক্ত সাপের ভয়ে ঘরে থাকতে পারি না।
মিরু প্রামাণিক জানান, একমাস ধরে রান্না ঘরে পানি, চুলা ডুবে গেছে। সবার বাড়িতেই একই সমস্যা, কে কাকে খাওয়াবে বলেন। এভাবে ছেলেমেয়ে নিয়ে কি বেঁচে থাকা যায়?
কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার দুই বিঘা জমির কলাবাগানের কলাগাছ মরে যাচ্ছে। আমার মতো অনেকেরই বাগানের কলা ও লেবুর গাছ মরে যাচ্ছে, পানের বরজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
গৃহিনী আসমা খাতুন বলেন, রান্না খাওয়াতো বন্ধই। টয়লেটগুলো পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। পুরুষ মানুষেরা না হয় প্রাকৃতিক কাজ কোনো ভাবে সারতে পারে, আমরা নারীরা কি যে বিপদে আছি বোঝাতে পারবো না। এছাড়া নোংরা পানিতে হাঁটাচলা করায় ছেলেমেয়েসহ আমরা চুলকানিসহ নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছি।
ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মজনু শাহ বলেন, পাকা রাস্তার দুটি জায়গায় কেটে পানি বের করে দিলে আপাতত জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে। একই সঙ্গে দুটি হলে ভালো হয়, না হলে কমপক্ষে একটি ছোট কালভার্ট স্থাপন করে দিলে এমন দুর্ভোগ আর হবে না।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কবরস্থানও ডুবে গেছে। এই মুহূর্তে কোনো মানুষ মারা গেলে তার দাফন করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই।
স্কুল ছাত্র আবু রায়হান ও আশিক বলেন, ঘরের ভেতরে কাঁদাপানি, বসবাস করাই দায়। কীভাবে পড়বো, প্রায় এক মাস ধরে স্কুলে যাওয়া, লেখাপড়া সব বন্ধ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমি আজই শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।