মেয়ে পূজাকে ‘চুমু’ বিতর্ক, মহেশ ভাটের ‘জটিল’ পারিবারিক জীবন

মেয়ে পূজাকে ‘চুমু’ বিতর্ক, মহেশ ভাটের ‘জটিল’ পারিবারিক জীবন

21 September, 2025 | সময়: 12:30 pm

ভারতের চলচ্চিত্রে সমসাময়িক বাণিজ্যিক সিনেমার প্রসঙ্গ উঠলে যে কয়জন নির্মাতা বারবার আলোচনায় আসেন, তাদের অন্যতম মহেশ ভাট। পরিচালনা, প্রযোজনা, চিত্রনাট্য- সব ক্ষেত্রেই তাঁর সাফল্যের ছাপ স্পষ্ট। সমানভাবে তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, আবার তাকে ঘিরে থেকেছে বিতর্কও। আজ ২০ সেপ্টেম্বর, এই চলচ্চিত্রকারের ৭৭তম জন্মদিন।

বয়সের হিসেবে তিনি প্রবীণ, কিন্তু আলোচনায় টিকে থাকার ক্ষমতা এখনো যথেষ্ট সক্রিয়। ভারত তো বটেই, বাংলাদেশেও সিনেমাপ্রেমীরা তার নাম শুনলেই চিনতে পারেন। তবে দীর্ঘ কর্মজীবনের সাফল্যের পাশাপাশি যেটি বারবার সামনে এসেছে, সেটি হলো একটি ছবি- যেখানে দেখা যায় মেয়ে পূজা ভাটকে ঠোঁটে চুম্বন করছেন মহেশ ভাট। তিন দশকের বেশি সময় ধরে ছবিটি ঘিরে থাকা বিতর্ক আজও থামেনি। জন্মদিন ঘিরে আবারও সেই প্রসঙ্গ ফিরে এসেছে।

১৯৯০ সালের শুরুর দিকে ভারতের একটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে প্রকাশিত হয়েছিল ছবিটি। ছবিতে কিশোরী পূজা ভাট বাবার কোলে বসে আছেন, আর মহেশ ভাট মেয়েকে ঠোঁটে চুম্বন করছেন। প্রকাশের পরপরই প্রচণ্ড সমালোচনার ঝড় ওঠে।

অনেকের কাছে এটি আর পাঁচটা স্নেহময় পারিবারিক মুহূর্ত ছিল না, বরং অনেকে একে অগ্রহণযোগ্য ও অস্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে দেখেন। ভারতের সামাজিক বাস্তবতায় ছবিটি তখন চরম বিতর্ক তৈরি করে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে জনমনে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। আজও সেই বিতর্ক সময়ের পরতে পরতে ফিরে আসে। তবে পূজা ভাট সব সময়ই এটিকে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ বলে দাবি করেছেন।

তার মতে, এটি ছিল একেবারেই নির্দোষ ও স্বাভাবিক একটি মুহূর্ত, যা মানুষ অন্যভাবে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সম্প্রতি এক ভিডিও সাক্ষাৎকারেও তিনি বলেন, এ নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই তাঁর। পূজার ভাষায়, “এটা আমার কাছে খুব সাধারণ একটা সময় ছিল। মানুষ যা চাইবে, তাই ব্যাখ্যা করবে। শাহরুখ খান একবার আমাকে বলেছিলেন, যখন তোমার মেয়ে হবে, তখন সেও তোমাকে বলবে, ‘মা, আমার গালেও একটা চুমু দাও।’ আমি আজও বাবার কাছে দশ বছরের একটি ছোট মেয়ে।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, “যদি কেউ বাবা-মেয়ের সম্পর্ককে অন্যভাবে দেখতে চায়, তবে তারা যেভাবে খুশি সেভাবেই ব্যাখ্যা করবে। অথচ আমাদের সমাজ পারিবারিক মূল্যবোধের কথা বললেও স্নেহময় মুহূর্তকে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে দ্বিধা করে না।”

বাবা-মেয়ে দুজনেরই অভিমত, ছবিটি আসলে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলের কারণে অন্যভাবে বোঝার সুযোগ তৈরি করেছিল। তাঁদের দাবি, এটি ছাড়া আর কিছু নয়— একটি স্বাভাবিক পারিবারিক মুহূর্ত, যেখানে ভরপুর স্নেহ আর ভালোবাসা রয়েছে।

তবে মহেশ ভাটের ব্যক্তিজীবনও তাঁর চলচ্চিত্রের মতো নাটকীয়। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন লরেন ব্রাইট, যিনি পরে নাম পরিবর্তন করে কিরণ ভাট হন। তাঁদের সংসারে জন্ম নেন পূজা ভাট ও রাহুল ভাট। তবে কর্মজীবনের নানা টানাপড়েন ও ব্যক্তিগত মতভেদে এই সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে মহেশ ভাট নতুন করে সম্পর্ক শুরু করেন অভিনেত্রী সোনি রাজদানের সঙ্গে। একসময় বিয়েও করেন তাঁরা। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার আগেই মহেশ ভাট দ্বিতীয় বিয়ে করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেন বলিউড পাড়ায়। তাদের সংসারে জন্ম নেয় দুই কন্যা শাহিন ভাট ও আলিয়া ভাট। আজ বলিউডে আলিয়া ভাট সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকাদের একজন। কিন্তু এই পরিবারের ভেতরেও নানা প্রশ্ন, সমালোচনা ও গুজব ছিল অবিচ্ছেদ্য।

বড় কন্যা পূজা ভাট একবার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘আমার বাবা যখন সোনিকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি আমাকে সব খোলাখুলি বলেছিলেন। অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, কীভাবে একটি ছোট মেয়েকে এসব বলা যায়। কিন্তু আমি আমার ভাইবোনদের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখি না। সোনি আমার কাছে সব সময় পরিবার। আমরা সবাই মিলে একটা পরিবার।’

এ ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিতে অসম বয়সের প্রেমের জন্য মহেশ ভাট সর্বাধিক আলোচিত এক ব্যক্তিত্ব। এর আগে কঙ্গনা রানাওয়াতের সঙ্গেও নাম জড়ায় তার। কঙ্গনা তার হাত ধরেই বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গেও সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়ায় তাকে ঘিরে। অনেকে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পেছনেও তার জড়িত থাকার কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। সব মিলিয়ে, মহেশ ভাট বলিউডের এমন এক রাজা, সাফল্য আর আভিজাত্যের মাঝে যিনি বিতর্কের কাটাতারেও নিজেকে বিদ্ধ করেছেন বার বার।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।