রাজশাহীর চারঘাটায় মাল্টা চাষে ভাগ্য বদল চারঘাটের হানিফের

রাজশাহীর চারঘাটায় মাল্টা চাষে ভাগ্য বদল চারঘাটের হানিফের

22 September, 2025 | সময়: 2:36 pm

স্বপ্ন ছিল তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিজ এলাকায় এমন কিছু করা যা দিয়ে নিজেদের সংসারটা টেনে নিয়ে যেতে পারবো স্বচ্ছলভাবে, কথাগুলো বলছিলেন চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের আমেদুল মন্ডলের ছেলে হানিফ মন্ডল। সেই স্বপ্ন এখন ধীরে ধীরে বাস্তবে রুপ নিচ্ছে মাল্টা চাষের মধ্যে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মাটি ও আবওহাওয়া মাল্টা চাষের অনুকুল হওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অঞ্চলে বিদেশী ফলের চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এ ফসলের উৎপাদন খরচ খুবই কম। কিটনাশক সারসহ অন্যান্য সারের ব্যবহার খুবই কম। গাছের চারা ঠিকমতো লালন পালন করতে পারলে চারা লাগানোর তিন বছর গাছ থেকে ফল পাওয়া শুরু হয়।

কৃষি উদ্যোক্তা হানিফ ও বেশ কয়েক বছর পূর্বে পরিক্ষামূলকভাবে শুরু করেন মাল্টা চাষ। শুরুতে ভয় থাকলেও গত দুই বছর যাবৎ তার বাগানে ফলন হয়েছে আশানুরুপ। ফলের আকার ও স্বাদ সচারাচর আমদানীকৃত মাল্টার চেয়ে ভালো থাকায় বাজারে এর চাহিদা বেশি। এতে করে নিজের পায়ে দাড়ানোর আশায় আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছেন তিনি।

হানিফ জানান, একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য অনার্স শেষ করে চাকুরীর পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেন গড়ে তুলেন হানিফ এগ্রোফার্ম ও নার্সারী। এ নামকরনে ২০১৯ সালে উপজেলার শুলুয়া ইউনিয়নের ফতেপুরে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন মাল্টা ও কমলার চাষ।

পর্যায়ক্রমে বেড়ে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ করছেন। শুরুতে সাথি ফসল হিসেবে পেয়ার চাষ করেও সাফল্য পেয়েছেন। এখন ২৬ বিঘা জমিতে মাল্টার পাশাপাশি আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ চাষ করছেন। মাটি ও আবওহাওয়া অনুকুল থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে গাছগুলো ভালো বেড়ে উঠে। ৫ম বছর থেকে ফলন শুরু হয়। তবে ষষ্ঠ বছরে খুব ভালো ফলন হয়, তবে এই বছরে তার বাগানে এসেছে বাম্পার ফলন।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলাম, গাছ হবে তো, ফল আসবে তো? কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসের নিয়মিত পরামর্শে বাগান পরিচর্যা করেছি। এখন বাগানের প্রতিটা গাছ থেকে গড়ে ৮০-১০০ কেজি মাল্টা পাচ্ছি।’

বাগানে রয়েছে বারি-১, ইয়োলো মাল্টা, ভিয়েতনামী মাল্টা, মরোক্কো মাল্টা, চাইনিজ কমলা, দার্জিলিং কমলা ও ভেরিকেট মাল্টা। তবে পরিক্ষামূলকভাবে নতুন জাতের কাশ্মিরি কেনু, জাপানী সিডলেস মাল্টা ও পাওকেনু-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় মাল্টার উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এতে লাভ বেশি।

হানিফের এই সাফল্য এখন এলাকায় আলোচনার বিষয়বস্তু। প্রতিবেশি এলাকা, নিজ জেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলার অনেকেই তার বাগান ঘুরে দেখে উৎসাহ পাচ্ছেন। সফল উদ্যোক্তা হওয়ায় সরকারের সর্বোস্তরের কর্মকর্তা, তরুন উদ্যোক্তাসহ সাধারন মানুষের ভিড় লেগেই থাকছে হানিফের মাল্টা বাগানে।

পাশাপাশি মাল্টা ও মাল্টার চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাগান থেকে মাল্টা কিনে নিয়ে যান স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরাও। প্রতি কেজি ২শ টাকা দরে বিক্রয় করেন তিনি। এতে তার বাগান থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, ‘মাটি ও আবওহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। হানিফের মতো অনেক কৃষক এখন মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। আমরা প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সার দিয়ে তাদের সহযোগীতা করছি। ভবিষ্যতে মাল্টা চাষে আরও সাফল্য আসবে বলে আশা করছি।’

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।