সিরাজগঞ্জে চলনবিলে অবাধে চলছে শামুক ক্রয়-বিক্রয়

সিরাজগঞ্জে চলনবিলে অবাধে চলছে শামুক ক্রয়-বিক্রয়

24 September, 2025 | সময়: 5:56 pm

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাকড়শন এলাকায় ভোরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শামুক সংগ্রহ। এখানে গড়ে উঠেছে শামুকের আড়ৎ, যেখানে প্রতিদিন চলে জমজমাট ক্রয়-বিক্রয়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে চলনবিলের জীববৈচিত্র্য।

সারারাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, নাটোরের সিংড়া ও গুরুদাসপুরের বিভিন্ন অংশ থেকে বিশেষ জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ভোর হলে বস্তা ভর্তি শামুক নৌকা করে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের নানাস্থানে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে মাছের ঘের ও হাঁসের খামারে এই শামুকের চাহিদা ব্যাপক।

বর্তমানে ২০ থেকে ২৫টি আড়ত সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিটি আড়তে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই টন শামুক ক্রয়-বিক্রয় হয়। তাড়াশ উপজেলার কামাড়শোন, দিঘি সগুনা, কুন্দল মাকড়শন, মান্নাননগর, ঘরগ্রাম ও মাগুরা বিনোদসহ আশপাশের ২০-২৫টি এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ নৌকায় শামুক ও ঝিনুক আহরণ করা হয়। অনেক ব্যবসায়ী এসব নৌকা ও জাল সরবরাহ করেন। এতে প্রতিবছর কোটি টাকার শামুক ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।

প্রতিটি নৌকায় সাধারণত ৪-৫ জন মিলে ২৫ থেকে ৩০ বস্তা শামুক সংগ্রহ করেন। এসব শামুক বিক্রি হয় নৌকা প্রতি তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। এর মধ্যে তেলসহ আনুষঙ্গিক খরচ দাঁড়ায় ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা। শামুক ধরার বিষয়ে কথা হয় কৃষকদের সাথে। তারা বলেন, বর্ষার সময়ে কৃষিকাজ বন্ধ থাকে, তাই পেটের দায়ে শামুক ধরা হয়।

শামুক ব্যবসায়ী কামাল বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে শামুক কিনে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মাছের খামারে সরবরাহ করা হয়। তিন-চার মাসের বর্ষা মৌসুমেই এই ব্যবসা চলে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ৭-৮ বছর ধরে চলছে শামুক-ঝিনুক নিধন। প্রকাশ্যে কেনাবেচা হলেও কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে। চলনবিলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় শামুক ও ঝিনুক অপরিহার্য।

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, অল্প পরিমাণে যদি শামুক আহরণ করা হয়, আর প্রচুর পরিমাণে যদি শামুক উৎপন্ন হয় – তাহলে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অতিমাত্রায় শামুক আহরণ হলে পানির প্রাকৃতিক ফিল্টার নষ্ট হয়ে যায়। এতে ইকোসিস্টেম নষ্ট হওয়ার ফলে জীববৈচিত্র্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, যারা শামুক আহরণ করছেন, তারা যখন সেগুলো বিক্রি করবেন তখন আমরা দেখব। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না। কয়েকটি পয়েন্টের খোঁজ পেয়েছি।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা আর শামুক আহরণ করতে দেব না। এলার্ম দেওয়া আছে, শুরু হলেই আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শামুক শুধু মাছের খাদ্য নয়। এটি পানিতে থাকা ক্ষুদ্র জীব খেয়ে জলাশয়কে পরিচ্ছন্ন রাখে এবং মাটির উর্বরতা বজায় রাখে। যা চলনবিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অতি প্রয়োজনীয়। কিন্তু নির্বিচারে আহরণের ফলে জীববৈচিত্র্য এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর ফলে চলনবিলের পানি দূষিত হবে ও মাছ কমে যাবে। পাশাপাশি মাটির উর্বরতাও প্রভাবিত হবে।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।