রংপুরে সাংবাদিক অপহরণ ও নিযাতনকারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ

রংপুরে সাংবাদিক অপহরণ ও নিযাতনকারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ

28 September, 2025 | সময়: 10:40 pm

সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুরে সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে অপহরণ করে সিটি করপোরেশনে নিয়ে নির্যাতন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার চেষ্টা, মব তৈরি করে সাংবাদিকদের মারধর এবং হেনস্থার মামলার আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে মিট দ্যা মহানগর পুলিশ কমিশনার কর্মসূচি পালন করেছে গণমাধ্যমকর্মীরা।

এসময় জড়িত এবং ইন্ধনদাতারা গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের উদ্যোগে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতারা। এসময় উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) তোফায়েল আহমেদ, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিছুর রহমান লাকু উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বক্তব্য দেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী, রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুব রহমান হাবু, আরপিইউজে ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি শফিউল করিম শফিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মানিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল শাহীন, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শরীফা বেগম শিউলি, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুরের সভাপতি মমিনুল ইসলাম রিপন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুরের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ডেমি, রংপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আতিক হাসান প্রমুখ।

মিট দ্যা পুলিশ কমিশনার কর্মসূচিতে সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ উপস্থাপন করে মামলা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার আট দিন হলেও মাত্র ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চারজনকে ‘আইওয়াশ’ বদলি করা হয়েছে সিটি করপোরেশন থেকে। অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মব তৈরির চেষ্টা করছে। ফেসবুকে লাইভ করছে। কর্মূসচির নামে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে তারা। সরকারি চাকরিবিধি অমান্য করে রংপুর সিটি করপোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাগরিকদের জিম্মি করে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠনেরও উদ্যোগ নেই।

এসব ঘটনার ব্যবস্থা ৭ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান দেখতে চান সাংবাদিক নেতারা। এসময় সাংবাদিক নেতারা আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচির কথা জানান পুলিশ কমিশনারকে। সেই অনুযায়ী রোববার মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক হয়। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক, ৩০ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনার, ১ অক্টোবর ডিআইজি ও র‌্যাব-১৩ সিও, ৪ অক্টোবর সেনাক্যাম্প ইনচার্জের সাথে সাক্ষাত, ৫ ও ৬ অক্টোবর সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে গণসংযোগ এবং ৭ অক্টোবর দাবি আদায়ে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে সংহতি সমাবেশ করা হবে।

বৈঠক শেষে মহানগর পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী জানান, সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের পাশাপাশি অভিযোগপত্র দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আইনের এমন প্রয়োগ করতে চাই, ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরণের ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস না পায়।

উল্লেখ্য, গত ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধার নামে অটোর লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকার বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর জেরে ২১ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদ ও একুশে টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার এবং রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদলকে নগরীর কাচারী বাজার থেকে জুলাই রাজবন্দির পরিচয়ে রকি নামের এক যুবকের নেতৃত্বে অপহরণ করে নিয়ে সিটি করপোরেশনেরে এনে নির্যাতন করা হয়।

পরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিউজের জন্য ক্ষমতা চাইতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ছুটে গেলে সিটি করপোরেশনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রধান ফটক আটকে দিয়ে মব তৈরি করে সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তা করেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক বাদল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা, ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, সাবেক কাউন্সিলর লিটন পারভেজ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তম্ময় কুমার সরকারসহ ১৪ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় জড়িত রতন ও সাগর নামের দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রতন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বদলি করা হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ চারজনকে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জড়িত অপর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো সরকারি চাকরি বিধিমালা ভেঙে নগরবাসিকে জিম্মি করে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।