দুর্গাপূজা উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে দুই দেশের দর্শনার্থীদের ভিড়

দুর্গাপূজা উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে দুই দেশের দর্শনার্থীদের ভিড়
হিলি, দিনাজপুর : শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে দুই দেশের দর্শনার্থীদের ভিড়। সীমান্তের এপার বাংলা ও ওপার বাংলার অংশে ভিড় করেন তারা। কেউ এসেছেন পূজা দেখতে, আবার কেউ বা এসেছেন অপর পাশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্ত সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফ এর কঠোর নিরাপত্তার কারণে দুর থেকে হাত নেড়ে মনের ভাব প্রকাশ করে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে দশনার্থীদের।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বেলা ১২ টায় হিলি সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, হিলি চেকপোস্টের নোম্যান্স ল্যান্ডে শত শত মানুষের পদচারণায় চারপাশ মুখর হয়ে ওঠে। সীমান্তের দুই প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। কেউ পূজা দেখতে, কেউবা অনেক দিন দেখা হয়নি আত্মীয় স্বজনকে অন্তত দুর থেকে দেখার জন্য এসেছেন।
হিলি সীমান্তে আসা দর্শনার্থীরা জানান, সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে দুই বাংলাকে ভাগ করে দিলেও আমাদের মনকে তো আর ভাগ করতে পারেনি, আগে তো দুই বাংলা একই ছিল। তাই ভালোবাসার টানে, প্রাণের টানে, নাড়ির টানে তারা ছুটে এসেছেন সীমান্তের শুন্য রেখায়। এছাড়াও তাদের অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছে ভারতে। কাটাতারের ফাঁক দিয়ে দুর থেকে আত্মীয় স্বজনকে দেখছেন তারা।
দর্শনার্থীরা আরও জানান, যদি একটু ভিতরে এক দিনের জন্য যেতে দিতো তাহলে ভিতরে গিয়ে প্রতিমা দেখা যেতো , আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করা যেতো এবং মন খুলে কথা বলো যেতো। এক দিনের জন্য হলেও এপার বাংলা ওপার বাংলার মানুষেরা যেন প্রতিমা দেখতে পারে সেই জন্য দু’দেশের সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি আমরা।
স্থানীয়রা জানান, পাসপোর্ট-ভিসাধারীরাই সীমান্ত পার হয়ে অপর প্রান্তে যেতে পারেন। যাদেও পাসপোর্ট ভিসা নেই, তারা দুর থেকেই স্বজনদের দেখেন। তবে যদি সামান্য ভেতরে যেতে দেওয়া হতো, তবে প্রতিমা দর্শনের পাশাপাশি প্রিয়জনদের সাথে মন খুলে কথাও বলা যেত।
জয়পুরহাট থেকে আসা তৃপ্তি রানী বলেন, আমার বোন-ভাগনি থাকেন ভারতে। দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর তাদের সঙ্গে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ নেই। আমার পাসপোর্ট নেই যে ভারতে গিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো। তেমনি ওদেরও পাসপোর্ট নেই বলে আসতে পারেনা। পূজার সময় নাকি দেখা-সাক্ষাৎ করতে দেয়, সে কারণেই আজ হিলি সীমান্তে এসেছি। কিন্ত ওদের সঙ্গে দেখা করা ও কথা বলা সম্ভব হচ্ছিল না। বিজিবি কাছে যেতেই দিচ্ছিল না। বলছে অনুমতি নেই। আমরা যেমন সীমান্তের কাছে দাঁড়িয়ে আছি, তেমনি ভারতে থাকা আত্মীয়-স্বজনও এসে সীমান্তের ওপারে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ঘোড়াঘাট থেকে আসা এক দশনার্থী বলেন, শুনেছিলাম পূজায় একদিনের জন্য সীমান্ত নাকি খুলে দেওয়া হয় মানুষ পারাপারের জন্য। সেই কথা লোকমুখে শুনে পরিবার নিয়ে হিলি সীমান্তে এসেছি, ভারতে গিয়ে পূজা দেখবো বলে। কিন্ত এসে দেখি খুলে দেওয়া তো দূরে কথা, সীমান্তের কাছাকাছি বিজিবি আমাদের যেতেই দিচ্ছে না। আমাদের লোকজন ওপারে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সঙ্গে যে একটু দেখা করবো, কথা বলবো, সেই সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছি।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিলি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন যাত্রী পারাপার বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে অনেকে ভারতে যাচ্ছেন, আবার ভারত থেকেও বহু দর্শনার্থী আসছেন বাংলাদেশে। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও অনেকে যাচ্ছেন।
যদিও সীমান্তে কড়া নিরাপত্তায় রয়েছে বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা,তবুও কাঁটাতারের দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখেমুখে আনন্দ, আবেগ আর ভালোবাসার আবহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একে অপরকে দেখার আকাঙ্ক্ষা, দূর থেকে হলেও স্বজনদের সাথে হাসি বিনিময়। সব মিলিয়ে এই দৃশ্য সীমান্তে এক অনন্য আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করে। ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে এমন মিলনমেলা তাই শুধু দুর্গাপূজার আনন্দই নয়, দুই বাংলার মানুষকে হৃদয়ের বন্ধনে আরও কাছে টেনে আনে। কাঁটাতারের বেড়া তাদের শারীরিকভাবে আলাদা করলেও মন ও ভালোবাসায় দুই বাংলার মানুষ একাকার হয়ে ওঠেন এই শারদীয় উৎসবে।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।