বিয়ে করতে ভয় পায় কেন?

বিয়ে করতে ভয় পায় কেন?
বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি, যার দ্বারা একটি পরিবারের সৃষ্টি হয়। মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই বিয়ের বিধান চলে আসছে। তবে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে অনেকের মধ্যেই এক ধরনের ভীতি বা অনিশ্চয়তা কাজ করে।
gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
এটি একেবারেই স্বাভাবিক একটি অনুভূতি, তবে কখনও কখনও এই ভীতি এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেও মানুষ পিছিয়ে আসেন।
তবে বিয়ে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারা অথবা বিয়ে করতে ভয় পাওয়া সাধারণ কোনো বিষয় নয়। রোগবিদ্যা বলছে এটি অসুখ; এর নাম গ্যামোফোবিয়া। গ্রিক শব্দ গ্যামো অর্থ বিয়ে ও ফোবিয়া অর্থ ভয়। গ্যামোফোবিয়া হলো বিয়েতে ভয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে বৈবাহিক সম্পর্ককে হুমকিস্বরূপ মনে হয়।
বিয়েভীতি একটি অসুখ
আপনি যদি গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বিয়ের কথা শুনলেই বা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাবে অন্যান্য ফোবিয়ার মতোই আপনার ভেতর কিছু শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে-
১. অস্থিরতা, বুকে ব্যথা
২. নিশ্বাস নিতে না পারার অনুভূতি
৩. ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া
৪. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
৫. আতঙ্কে, ভয়ে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে না পারা
৬. ঠিকভাবে কথা বলতে না পারা
৭. মাথাব্যথা
৮. হুট করে রেগে যাওয়া
৯. ঘামা, পানির পিপাসা লাগা
১০. কাঁপাকাঁপি
ওপরের লক্ষণগুলো ছাড়াও গ্যামোফোবিয়ার রোগীরা বিয়ের কথা শুনলেই অনাগত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে পারেন। ওই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার জন্য উদ্যোগী হতে পারেন। মোদ্দাকথা হলো, ‘প্যানিক অ্যাটাক’ থেকে নানা নেতিবাচক চিন্তায় ডুবে ছয় মাস পর্যন্ত হতাশা আর বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন ওই ব্যক্তি।
গ্যামোফোবিয়ার কারণ:
১. অতীতের আঘাত, অতীতের সম্পর্কের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, অবিশ্বাস বা বেদনাদায়ক বিচ্ছেদের কারণে অনেকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান।
২. ব্যক্তির পারিবারিক ইতিহাসে যদি অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক, বিচ্ছেদ ও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলেও বিয়ে ভীতি হতে পারে।
৩. ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যও গ্যামোফোবিয়ার কারণ হতে পারে। যেমন অনেকে স্বাভাবিকভাবেই খুব উদ্বিগ্ন থাকেন, আবার তারা প্রচুর স্বাধীনতা চান। এ ধরনের ব্যক্তিরা মনে করেন বিয়ে করলে স্বাধীনভাবে, নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচা যাবে না। তাই বিয়ে ভীতিতে ভীত হন।
৪. সাংস্কৃতিক বা সামাজিক চাপ যেমন বিয়ের বিষয়ে সামাজিক প্রত্যাশা, চাপ, উদ্বেগও ভয়ের কারণ হতে পারে।
যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনি এ রোগে আক্রান্ত
আপনার মধ্যে যদি কাউকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ভয় কাজ করে, একজনের সঙ্গে জীবন কাটাতে হবে এ ভয়ে যদি সম্পর্ক থেকে পালাতে চান, বিয়ের পর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে ভেবে ভয় পান, সম্পর্ককে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার কারণ মনে করেন তাহলে আপনি গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্ত। ভয় ও উদ্বেগ থেকে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে, ঘাম, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে।
গ্যামোফোবিয়া কাটিয়ে ওঠার উপায়
গ্যামোফোবিয়া থেকে মুক্তি পেতে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। বিশেষজ্ঞ ছাড়া পাড়া-প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুদের কাউন্সেলিং নিলে যথেষ্ট হবে না। বিশেষজ্ঞরা কগনিটিভ-বিহেভিয়ারাল থেরাপি বা সিবিটি দিয়ে থাকেন। এছাড়াও আপনার রোগের তীব্রতা বোঝে চিকিৎসা দেবেন। এর পাশাপাশি মেডিটেশন, ব্যায়াম ইত্যাদি চালিয়ে যেতে পারেন। গ্যামোফোবিয়ায় আক্রান্তদের কোনো গ্রুপ থাকলে সেখানে যুক্ত হতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেখানে একই ধরনের ভয়ের কথা অনেকে শেয়ার করেন, পাশাপাশি ভয় কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ পাওয়া যায়, সেখান থেকে উপকার পাওয়া যেতে পারে। সঙ্গী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।