পাকিস্তানের টেক্সটাইল খাতে রপ্তানি বিপর্যয়

পাকিস্তানের টেক্সটাইল খাতে রপ্তানি বিপর্যয়

7 October, 2025 | সময়: 1:26 pm

পাকিস্তানের টেক্সটাইল খাতে রপ্তানি বিপর্যয় শুরু হয়েছে। এটি ধসে পড়ছে চোখের সামনেই। বছরের পর বছর অদূরদর্শী নীতির ফল এখন স্পষ্ট, যেখানে শিল্পের অদক্ষতা টিকিয়ে রাখতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

গুল আহমেদ টেক্সটাইল মিলসের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে এই সংকটের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সংস্থাটি তাদের পোশাক রপ্তানি বিভাগ বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানিয়েছে—‘ক্রমাগত লোকসান, ব্যয় বৃদ্ধি, নীতিগত পরিবর্তন ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা।’

কম্পানিটি বলেছে, ‘প্রতিযোগিতামূলক চাপ, শক্তিশালী বিনিময় হার, অগ্রিম টার্নওভার ট্যাক্স বৃদ্ধি, কাপড়ের দাম বৃদ্ধি এবং উচ্চ বিদ্যুৎ শুল্ক—সব মিলিয়ে আমাদের খরচের কাঠামো ও লভ্যাংশকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

এই কারণগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে অভ্যন্তরীণ নীতিগত ব্যর্থতাই পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানি খাতের পতনের মূল কারণ। ফলে ভারত, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান পিছিয়ে পড়ছে।

একই সঙ্গে, পাকিস্তানের বাণিজ্য সংগঠন ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লজিস্টিক খাতের ভয়াবহ অদক্ষতার দিকেও সতর্ক করেছে। তাদের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের লজিস্টিক খাত এতটাই অদক্ষ ও ব্যয়বহুল যে এটি রপ্তানিকে শ্বাসরুদ্ধ করছে।

দেশে পণ্য পরিবহনে জিডিপির ১৫.৬ শতাংশ ব্যয় হয়—যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ফলে রপ্তানি পণ্য বৈশ্বিক বাজারে পৌঁছানোর আগেই প্রতিযোগিতা হারায়।

বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিক পারফরম্যান্স সূচক (এলপিআই) থেকে পাকিস্তানের নাম বাদ পড়েছে, অথচ ভারত, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। করাচি ও পোর্ট কাসিম নামক দেশের প্রধান বন্দর দুটি মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সক্ষমতায় চলছে, যেখানে কনটেইনার খালাসে সময় লাগে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ। এই অদক্ষতাই রপ্তানি প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে ক্ষয় করছে।

তবুও নীতিনির্ধারকরা আশ্রয় নিচ্ছেন ভিন্ন এক ভরসায়—রেমিট্যান্সে। সরকার আশা করছে, এ বছর প্রবাসী পাকিস্তানিদের পাঠানো অর্থ ৪৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা রপ্তানির দুরবস্থা সত্ত্বেও চলতি হিসাবের ঘাটতি সাময়িকভাবে সামলাতে সহায়তা করবে।

কিন্তু শুধু রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করা এক প্রকার বিভ্রম ছাড়া কিছু নয়। এই অর্থপ্রবাহ ঘাটতি পূরণে সহায়তা করলেও তা শিল্প গড়ে তুলতে পারে না, বন্দর উন্নত করতে পারে না কিংবা রপ্তানিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে না।

যে দেশ তার শিল্পের রপ্তানির চেয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের ওপর বেশি নির্ভর করে, সে দেশ আসলে নিজের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকেই ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

সূত্র : ডন

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।