অস্থায়ী হাটে ‘লাল চন্দন’ ভেবে বিক্রি হচ্ছে নদীতে ভেসে আসা কাঠ

অস্থায়ী হাটে ‘লাল চন্দন’ ভেবে বিক্রি হচ্ছে নদীতে ভেসে আসা কাঠ

8 October, 2025 | সময়: 3:10 pm

কুড়িগ্রাম, প্রতিনিধি : কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। পানি বাড়ার সাথে উজানের তীব্র স্রোতে কালজানি নদীর ভারতের দিক থেকে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি ফেসে আসতে থাকে। এসব গাছের বেশির ভাগই বাকল ও শিকড়বিহীন, রঙে লালচে। দেখতে চন্দন কাঠের মতো হওয়ায় অনেকেই এগুলোকে ‘লাল চন্দন’ ভেবে ভুল করছেন।

গত রোববার(০৫ অক্টোবর) বিকেল থেকে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের ঢলডাঙা ও শালঝোড় এলাকায় কালজানি নদী দিয়ে ভারতীয় পুষ্পা সিনেমার দৃশ্যের মতো এসব কাঠের গুঁড়ি ভেসে আসতে শুরু করে। সোমবার সেই কাঠ কালজানি নদীর ভাটিতে দুধকুমার নদ হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে পৌচ্ছায়। এতে করে ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় ভোর হতেই নৌকা, বাঁশের ভেলা ও টায়ার টিউব নিয়ে নদীতে নামে স্থানীয় মানুষ। কেউ সাঁতরে, কেউ ভেলায় ভর করে কাঠ ধরার প্রতিযোগিতায় নামে। এসব কাঠ বিক্রির জন্য নদীপাড়ে অস্থায়ী হাট গড়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে নাগেশ্বরী উপজেলার দামালগ্রাম এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একেকটি গাছের গুঁড়ি ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম আরও বেশি। নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে একটি বড় লালচে গুঁড়ি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম ধরা হয়েছে।

রায়গঞ্জের দামাল গ্রামের আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমরা চারজন মিলে প্রায় ৫০ ফুটের মতো এক গাছ তুলেছি। দেখতে একদম চন্দন কাঠের মতো। দাম চেয়েছি দেড় লাখ টাকা, তবে ১ লাখ ২০ হাজারে বিক্রি করব।’

আজাদ হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘আমার খড়ির গোলা (কাঠ বিক্রির দোকান) আছে। একেকটা গাছের গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। কেটে জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করব।’

ছিটমাইলানী গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, ‘পরিবারসহ সারারাত নদীতে থেকে প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। রান্নার জ্বালানির জন্য কিছু রেখে বাকিটা বিক্রি করব। মানুষ দামে কিনছে।’

কুড়িগ্রাম জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঠগুলো দেখেছি। এগুলো দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে রঙ লালচে হয়েছে। প্রকৃত চন্দন কাঠ নয়। শ্বেত বা রক্ত চন্দনের কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কাঠে ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ থাকে। কাঠ দীর্ঘদিন পানিতে ভেজা থাকলে এই যৌগগুলো বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারণের ফলে লালচে বা বাদামি রঙ ধারণ করে। এ কারণেই সাধারণ কাঠ-ও চন্দন কাঠের মতো রঙ পায়, কিন্তু আসলে এর সঙ্গে চন্দনের কোনো সম্পর্ক নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘চন্দন কাঠের বিশেষ গন্ধ থাকে, যা শুকনো কাঠ কেটে ঘষলে বোঝা যায়। কিন্তু এসব কাঠে কোনো গন্ধ নেই। এতে বোঝা যায়, এগুলো সাধারণ গাছের কাঠ।’

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।