সেফ এক্সিটের কথা আমরা বলেছিলাম শেখ হাসিনার আমলে: রিজভী

সেফ এক্সিটের কথা আমরা বলেছিলাম শেখ হাসিনার আমলে: রিজভী
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান উপদেষ্টা রুহুল কবির রিজভী নীলফামারীতে এক অনুষ্ঠানে সরকারের সমালোচনা করে ‘সেফ এক্সিট’-এর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে দমন-পীড়ন, গণতন্ত্র ধ্বংস এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) নীলফামারীতে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর পক্ষ থেকে তেলী মোস্তাকিন আলীর পরিবারের হাতে উপহার তুলে দেওয়ার সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, সেফ এক্সিটের কথা আমরা শেখ হাসিনার আমলেই বলেছিলাম। আপনি যে অন্যায় করছেন, যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন করছেন, যেভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন, আপনি নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করেছেন। রাজনীতিতে আপনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, গদি রক্ষার জন্য বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মীদের অদৃশ্য করেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা করছেন, ক্রসফায়ার দিচ্ছেন।’
তিনি নীলফামারীর ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনাদের এই নীলফামারীতে আমাদের প্রায় চার-পাঁচজন ছেলেকে এই অঞ্চলের একজন মন্ত্রীর নির্দেশে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। শুধুমাত্র তারা গণতন্ত্র ফেরানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলন করেছিল বলেই তাদের লাশ পাওয়া গেছে রাস্তার ধারে, খালের ধারে ও পুকুরের ধারে।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, ‘তিনি একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও এ ধরনের কাজ করেছেন। আমাদের দলেও তো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বেবী নাজনীন আছেন, তাঁকে কি কখনো এমন অমানবিক কাজ করতে দেখেছেন? আমাদের বর্ষীয়ান নেতারা বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়েও বিএনপির সঙ্গে আছেন এবং কাজ করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তখনই বলেছিলাম, আপনি যে এত অত্যাচার করছেন, আপনি কি আপনার সেফ এক্সিটের কথা চিন্তা করে রেখেছেন?’
বর্তমান সময়ে ‘সেফ এক্সিট‘-এর কথা বলছেন এমন একজন সাবেক সরকারি উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, তাঁকে চিন্তা করে বলতে হবে, তিনি কার সেফ এক্সিটের কথা বলছেন। তাঁর মতে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অন্যায় করে থাকে, যদি দুর্নীতি নয়, মহা দুর্নীতি করে থাকে, টাকা পাচার করে থাকে, অপরাধ করে থাকে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে তার সেফ এক্সিট দরকার। আপনি তো এই সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, আপনি বলুন কারা কারা এ ধরনের অন্যায় ও অপরাধ করেছে। তখন তারাও তাদের সেফ এক্সিটের কথা চিন্তা করবে, জাতিও চিন্তা করবে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সকল গণতান্ত্রিক দল সমর্থন করেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘ড. ইউনুস একজন গুণী ব্যক্তি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ভালো কাজ করবে এটাই আমাদের সকলের কাম্য ছিল।’
তিনি সেই সাবেক উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ‘আপনি তো এই সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, আপনি তালিকা দিন কারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, কারা টাকা পাচার করছে, কারা দুর্নীতি করছে, কারা অন্যায় করছে। আমরা তো বরাবরই এই সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে চাই, যাতে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে কাজ করে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে এবং তার আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করে।’
রিজভী জানান, এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে, অনেক কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিচ্ছে।
উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি এই সরকারের একজন উপদেষ্টা হওয়ার পরেও যখন বলছেন, তখন আপনাকে তালিকা দেওয়া উচিত। কারণ যার অন্তরের আলো থাকে, সততার আলো থাকে, তার বিরুদ্ধে হাজার অভিযোগ এলেও তার সেফ এক্সিটের দরকার হবে না।’
অনুষ্ঠানে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত সৈয়দপুর (সাংগঠনিক) জেলায় শহীদ সাজ্জাদ হোসেন ও শহীদ নাঈম বাবু-এর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে আর্থিক অনুদান দেয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম, সৈয়দপুর (সাংগঠনিক) জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আক্তার, কাতার বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মামুন-সহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মী।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।