শহীদ মিনারে শিক্ষকরা, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর ঘোষণা

শহীদ মিনারে শিক্ষকরা, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর ঘোষণা

20 October, 2025 | সময়: 4:43 pm

তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনের পর দিন শহীদ মিনারের পাদদেশে অবস্থান নিয়েছেন তারা। সরকারের ঘোষিত আংশিক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।

বাড়িভাড়া মাত্র ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে নবম দিনের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

শহীদ মিনারের পাদদেশে দিন-রাত অবস্থানরত শিক্ষকরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ফিরবেন না। তাঁদের অনেকেই মাদুর বিছিয়ে রাত কাটাচ্ছেন, কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়েও এসেছেন।

মুগদা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবদুল হালিম বলেন, আমরা খাতায় দেশের ভবিষ্যৎ গড়ি, কিন্তু নিজের ভবিষ্যৎটাই অনিশ্চিত। সরকারের ৫ শতাংশ প্রজ্ঞাপন আমাদের সঙ্গে অন্যায় রসিকতা ছাড়া কিছু নয়। দাবি না মানা পর্যন্ত এখানেই থাকব।

খুলনা থেকে এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এটা কেবল টাকার দাবি নয়, সম্মানের দাবি। বছরের পর বছর আমরা প্রতিশ্রুতি শুনেছি, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এবার দাবি না মানা হলে শহীদ মিনার ছাড়ব না।

হাফিজুর রহমান নামে এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষকরা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছেন, যেখানে ন্যায্য দাবি না মানলে এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে। সরকারকে এখনই ইতিবাচকভাবে বিষয়টি নিতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষক সুমনা পারভীন বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করছি না। এটা পেশাগত মর্যাদার আন্দোলন। শহীদ মিনার শুধু ভাষার স্মৃতি নয়, এখন এটি আমাদের ন্যায়বিচারের প্রতীক।

অবস্থানস্থলে দেখা যায়, শিক্ষকরা হাতে ব্যানার নিয়ে বসে আছেন— শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে, সম্মান চাই, দান নয়, ন্যায্য প্রাপ্য আমাদের অধিকার— এমন নানা স্লোগানে মুখর এলাকা। কেউ জাতীয় সংগীত গেয়ে, কেউ কবিতা পড়ে, আবার কেউ ব্যানার হাতে নীরব অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

অবস্থান কর্মসূচির খবর ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নাগরিক সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট-এর ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁদের তিন দফা দাবি হলো— মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা, এবং উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা।

অর্থ মন্ত্রণালয় গত রোববার শুধু ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করলেও শিক্ষকরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেছেন, আংশিক প্রজ্ঞাপন নয়, পূর্ণ দাবির বাস্তবায়ন চাই।

প্রজ্ঞাপন জারির পরদিন বিকেল পৌনে ৪টায় আন্দোলনরত শিক্ষকরা থালা-বাটি হাতে ‘ভুখা মিছিল’ নিয়ে শিক্ষা ভবনের দিকে অগ্রসর হন। হাইকোর্টের মাজার গেট এলাকায় পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পরে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তারা শহীদ মিনারে ফিরে গিয়ে পুনরায় অবস্থান শুরু করেন।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।