হিমাগারে রাখা আলুর ভাল দাম পাচ্ছে না নওগাঁর আলু চাষিরা

হিমাগারে রাখা আলুর ভাল দাম পাচ্ছে না নওগাঁর আলু চাষিরা

25 October, 2025 | সময়: 6:14 pm

ভাল দাম পাওয়ার আশায় এবছর নওগাঁর আলু চাষিরা আশায় বুক বেধে চাষাবাদ করেছিলেন। ভালো ফলনও হয়েছিল। কিন্তু আলু তোলার সময়ই থেকেই দাম কম ছিল। লাভের হিসেব কষে মৌসুমের শুরুতে হিমাগারে আলু রেখেছিলেন নওগাঁর কৃষক-ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাজার দর এমন জায়গায় ঠেকেছে লাভ তো দূরের কথা হিমাগার ভাড়া দেওয়ার ভয়ে আলু তুলছেন না অনেকেই। এমন পরিস্থিতে হিমাগারে রাখা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন তারা। নতুন করে আলুর আবাদ নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

Ad1st বিজ্ঞাপন

কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, কৃষকরা অনেকেই তাদের উৎপাদিত আলু হিমাগারে রাখেন লাভের আশায়। এ আলু বিক্রি করে তারা পরবর্তী ফসল উৎপাদনের আর্থিক জোগান দিয়ে থাকেন। তাছাড়া ব্যবসায়ীরাও কিনে হিমাগারে রাখেন লাভের আশায়। তাদের অভিযোগ, উৎপাদন থেকে শুরু করে হিমাগারে রাখা পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুতে খরচ পড়েছে ২৪ থেকে ২৬ টাকা।

৬০ কেজি প্রতি বস্তা আলু হিমাগার ভাড়া ও পরিবহন খরচ বাবদ পড়েছে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। অথচ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। সরকারের বেধে দেওয়া দাম ঝুলছে শুধু ব্যানার আর সাইনবোর্ডে। সরকার নির্ধারিত মূল্য ২২ টাকা কার্যকর না হওযায় দুশ্চিন্তায় তারা। নতুন করে আলুর আবাদ নিয়েও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সরকারের কাছে রপ্তানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখার দাবি জানান তারা।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ টন। গত বছর ২৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) হিসেবে, নওগাঁর আটটি হিমাগারে এবার সংরক্ষণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার বস্তা আলু। প্রতি বস্তার ওজন ৬০ কেজি ধরে সংরক্ষিত মোট আলুর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। এর বাইরে নওগাঁর কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বগুড়া, জয়পুরহাট ও রাজশাহীর হিমাগারেও আলু রেখেছেন। প্রতি কেজিতে ১০ টাকা লোকসান ধরলে শুধু নওগাঁর হিমাগারেই ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

সদর উপজেলার বর্ষাইল এলাকার কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, ৬ বিঘা জমিতে কার্ডিনাল ও গ্রানোলা জাতের আলু চাষ করেছিলাম। লাভের আশায় ২০০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছিলাম। মৌসুমে খুচরা বাজারে এসব আলুর কেজি খুচরায় ২৫ -২৭ টাকা, পাইকারিতে ১৭-১৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এখন খুচরা বাজারে মিলছে ২০-২২ টাকা, আর হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ১২-১৫ টাকায়। প্রতি বস্তায় হিমাগার ভাড়া ৩৫০ টাকা, বস্তার দাম ৮৫ টাকা, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ ১০০ টাকাসহ মোট খরচ পড়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো। তাতে প্রতি বস্তায় লোকসান হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।

বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর এলাকার এলাকার কৃষক বাচ্চু মন্ডল বলেন, ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। প্রথমে দাম কম থাকায় পরে ভালো দাম পাওয়ার আশায় ১৪০ বস্তা হিমাগারে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন তো ওই দামই পাচ্ছি না। পরের বছর আলু চাষ করবো কিনা এখনো ঠিক করেনি।

বদলগাছী উপজেলার পারসোমবাড়ী গ্রামের আলু ব্যবসাায়ী ইন্দ্রিস মিয়া বলেন, লাভের আশায় ৭০০ বস্তা আলু কিনে হিমাগারে রেখেছি। প্রতি বস্তায় আলুর দাম ১ হাজার ২০০ টাকার এবং পরিবহন, বস্তা ও হিমাগার খরচ ৪৫০-৫০০ টাকা পড়েছে। প্রতিকেজি আলুর বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। প্রতি বস্তায় লোকসান হবে ৭০০-৭৫০টাকা পর্যন্ত। সরকারের কাছে রপ্তানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখার দাবি জানান তিনি।

নওগাঁ ইষ্টার্ণ প্রডিউস কোল্ড স্টোরের ম্যানেজার সেতু মৈত্র বলেন, হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ৭০ হাজার বস্তার বিপরীতে ৭৫ হাজার ৬০০ বস্তা সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার বস্তা এখনো মজুত আছে। বাজারে আলুর দাম কম থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু বের করছেন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আলু বের করা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। পরে নষ্ট ও পঁচা আলু নিজ খরচে হিমাগার থেকে অপসারণ করতে হবে। এতে প্রায় ১ কোটি টাকার ওপর লোকসান হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হোমায়রা মন্ডল বলেন, এবছর আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে। কিন্তু আলুর বিকল্প ব্যবহার বাড়েনি। একারণে দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। দাম না পেয়ে হিমাগার থেকে আলু কম পরিমাণ বের হচ্ছে।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।