বৃহস্পতিবার

১৭ জুলাই, ২০২৫

২ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২১ মুহররম, ১৪৪৭

মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলো

মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলো

নানা সঙ্কটে মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো। অথচ ওসব হাসপাতালেই রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্ধারিত বেডের তুলনায় বেশি রোগীকে ভর্তি থাকছে। আর ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক বেশি রোগীর চাপ। রোগীর ওই বাড়তি চাপ সামলাতে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের অনেক সময়ই হিমশিম খেতে হয়। কারণ বেশির ভাগ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই শয্যা সংখ্যা ও জনবল সংকটে মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি মেডিজেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মধ্যে শয্যা সংখ্যা পূরণের হার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১৫ দশমিক ৪১, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯৪ দশমিক ৫৮, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮১ দশমিক ৩০, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭৪ দশমিক ৪৬, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬২ দশমিক ৬২, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩৯ দশমিক ৮৫, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩২ দশমিক ৫০, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২৪ দশমিক ৮৩, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৭ দশমিক ৪৬ ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শয্যা পূরণের হারের দিক থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শীর্ষে রয়েছে। ওই হাসপাতালটি সক্ষমতার তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ রোগীকে সেবা দিচ্ছে। হাসপাতালটিতে শয্যা সংখ্যা এক হাজার হলেও শয্যা পূরণের হার ২৩৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। হাসপাতালটি থেকে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন শয্যা সংখ্যার সোয়া তিন গুণেরও বেশি। এক হাজার শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দালাল আর শয্যা সংকটে রোগীদের সেবার মান ব্যাহত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রতি বছর গড়ে ১০-১২ লাখের বেশি রোগী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। হাসপাতালের ২ হাজার ২০০টি সাধারণ শয্যার বিপরীতে প্রতি বছর ওই বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালটিতে আইসিইউ শয্যা এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে।

শয্য সংখ্যার বিবেচনায় দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরেই অবস্থান। হাসপাতালটি চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার রোগীদের চিকিৎসার সবচেয়ে বড় গন্তব্য। কয়েক বছর ধরেই ওই হাসপাতালে শয্যার বিপরীতে দেড় গুণের বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এমনকি চমেকের জরুরি ও বহির্বিভাগে রোগীর চাপ বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তুলনায় বেশি। তাছাড়া বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল (শজিমেক) কলেজ হাসপাতালে শয্যা পূরণের হার ২১৫ দশমিক ৪১।

হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী। বগুড়ার রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে ৫০০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় নতুন শয্যা চালু হয়নি। আর সিলেট বিভাগে ৯০০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালটির বেড অকুপেন্সি রেট ১৮১ দশমিক ৩০ শতাংশ। ওই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন তিন-চার হাজার রোগী সেবা নেয়। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার রোগী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী অন্য জেলার রোগীরাও এ হাসপাতালে আসে। কিন্তু কম জনবল নিয়েও হাসপাতালটি রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করা। ৯০০ বেডের হলেও হাসপাতালে মাত্র ৫০০ বেডের সুযোগ-সুবিধা আছে।

এদিকে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের মতে, জনবল সঙ্কটে বেশি সংখ্যখ রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী সংকট নিরসন জরুরি। তাছাড়া সরকারি হাসপাতালের অনেক যন্ত্রপাতি অকেজো পড়ে থাকে। তাতে সেবা ব্যাহত হয়।

এদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর জানান, সব ক্ষেত্রেই ঘাটতি আছে। অনেক হাসপাতালে শয্যা থাকলেও লোকবলের অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। লোকবলের অভাব পূরণে একটি স্পেশাল বিসিএস নেয়া হবে। এর আগের বিসিএসেও অনেক চিকিৎসক নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে যে চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে তা কিছুটা হলেও পূরণ হবে। স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দেশে এখনো ১২ হাজার চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। একবারে তো সব ঘাটতি পূরণ সম্ভব না। পর্যায়ক্রমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।