পীরগঞ্জে বিদ্যালয়ের কেরানী থেকে রাতারাতি প্রধান শিক্ষক
পীরগঞ্জ, রংপুর: রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড় বদনাপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক সময় কেরানী হিসেবে নিয়োগ নেন মোর্শেদা বেগম। বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তির পর রাতারাতি তিনি সৃজিত কাগজপত্রের মাধ্যমে স্বামী রেজাউল করিমকে সভাপতি ও নিজে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরা হচ্ছেন- উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক,উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার সাজেদুল বারী ও সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জয়নুল হক।
তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়-“বিগত ২০০৫ সালের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেয়ার সময় মোর্শেদা বেগম চতরা ডিগ্রী কলেজ থেকে বি এ পাশ এর যে সনদ প্রদান করেছেন তা সম্পুর্ন ভুয়া। ওই সময় চতরা কলেজে ডিগ্রী খোলা হয়নি। পরবর্তীতে তিনি ২০১০ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি এ পাশের সনদ দাখিল করে পুনরায় ২০১৪ সালে নিয়োগ গ্রহন দেখান। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামোতে উল্লেখ রয়েছে,নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতে হলে ইনডেক্সধারী শিক্ষক হিসেবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এক্ষেত্রেও ২০১০ সালে স্নাতক পাশ করে ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া ২০১৪ সালে নিয়োগ সংক্রান্ত কোন প্রমানপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। তদন্তে আরও উল্লেখ করা হয়-মোর্শেদা বেগমকে উক্ত প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদে দেখা গেছে। উপরন্ত বিগত ২০০৫ সালের পর ওই বিদ্যালয়ে আর কোন নিয়োগই হয়নি।
এজন্য মোর্শেদা বেগমের প্রধান শিক্ষক হিসেবে থাকার কোন বৈধতা নেই। তিনি ক্ষমতার জোরে পদটি দখল করে রেখেছেন”। এদিকে বিদ্যালয়টির চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য ১ জন সিনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া জরুরী।
স্মরনযোগ্য যে,বড় বদনাপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে রাতারাতি নিয়োগ নিয়ে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন মোর্শেদা বেগম। বিগত ২০২২ সালে এমপিওভুক্তির পর কেরানী থেকে রাতারাতি জালিয়াতীর মাধ্যমে স্বামীর কাছ থেকে সৃজিত কাগজপত্রের মাধ্যমে গিলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক স্বামী রেজাউল করিমকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে সমস্ত রেকর্ডপত্র ভুয়া বানিয়ে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন তিনি।
এলাকাবাসী জানায়,তাঁর স্বামী রেজাউল করিম পার্শ্ববর্তী গিলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক। এমন কোন কাজ নেই যা তিনি করতে পারেন না। ব্যাকডেটে নিয়োগ থেকে শুরু করে সৃজিত কাগজপত্রের মাধ্যমে এমপি ভুক্তি,স্কেল পরিবর্তন ও অন্যান্য কাজ সবই তিনি করে দিতে পারদর্শী। এলাকাবাসী জানায়,বিগত ২০০১ ইং সালে বিদ্যালয়টি নিজের দেয়া জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় বাসীন্দা সাবেক ইউপি সদস্য কায়কোবাদ সাবু। তিনি বলেন-বিগত ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি সভাপতি ছিলাম।
এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বছরের পর বছর তালা দেয়া থাকতো স্কুলটিতে। শিক্ষক কর্মচারিরা কেউই আসতো না। এমপিওভুক্তির ঘোষনায় হঠাৎ রাতারাতি কিভাবে আমি কিভাবে সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়লাম তা কিছুই জানি না। তিনি আরও বলেন-মোর্শেদা বেগমকে ২০০১ সালে যোগ্যতা না থাকায় আমি কেরানী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। সে কিভাবে প্রধান শিক্ষক হয় ?
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে,এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর যাবতীয় তথ্য যাচাই বাছাই কমিটিতে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে মোর্শেদা বেগমের প্রধান শিক্ষক হবার জালিয়াতীর ঘটানাকে জায়েজ করে দেয়া হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মমিন বলেন-কাগজপত্র যাচাই করে ভুয়া প্রমানিত হয়েছে। এ মর্মে তদন্ত কমিটি কর্তৃক রিপোর্টও দেয়া হয়েছে। গত ২০ জানুয়ারী তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগম কি এক রহস্যজনক কারনে এ ব্যাপারে হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন ?
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম পেজটি ভিজিট করুন।
Post Comment