বীরগঞ্জের শান্তি মার্ডির হ্যাটট্রিকে সাফ জয়ের আনন্দে ভাসলো বাংলাদেশ

বীরগঞ্জের শান্তি মার্ডির হ্যাটট্রিকে সাফ জয়ের আনন্দে ভাসলো বাংলাদেশ
বীরগঞ্জ সংবাদদাতা : সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার ম্যাচে হয়েছে ইতিহাস। অসাধারণ ছন্দে খেলে একাই ৩ গোল করে দলের বড় জয় নিশ্চিত করেন। এই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে ভিন্ন দু’টি মাঠে। আর এমন ঘটনাবহুল ম্যাচে হ্যাট্রিক করেছেন শান্তি মার্ডি। ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে ৪-১ গোলের জয় এনে দিয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায় পরিবারের কন্যা শান্তি মার্ডি। গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে আসা শান্তি মার্ডির অসাধারণ ক্রীড়া নৈপূন্য দক্ষতায় মুগ্ধ গোটা দেশ।
শান্তির হ্যাট্রিকের মাধ্যমে পাওয়া এই জয় লাল-সবুজ শিবিরে জুগিয়েছে বাড়তি আত্মবিশ্বাস, আর বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে নতুন ইতিহাস। এই সাফল্যে দেশের মানুষের পাশাপাশি উৎসবে মেতে উঠেছে শান্তি মার্ডির গ্রাম দক্ষিণ পলাশবাড়ী। শান্তি মার্ডির কৃতিত্বে মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিল আর নাচ-গানে মুখর হয়ে ওঠে গ্রামের মানুষ। বিজয়ের আলো ছড়িয়ে পড়ে তাদের জীর্ণ কুটিরে।
দুর্দান্ত নৈপুণ্যে শান্তি মার্ডির ৩টি গোল শুধু একটি ম্যাচ জয়ের গল্প নয় এটি বাংলাদেশ নারী ফুটবলের ভবিষ্যতের স্বপ্নের পথচলা। শান্তি মার্ডির এই অর্জন প্রমাণ করে, প্রতিভা সুযোগ পেলে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা জয় করে বিশ্বমঞ্চেও নিজেকে তুলে ধরতে পারে।
শান্তি মার্ডি সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সাঁওতাল পরিবারের মেয়ে।
তার বাবা বাবু লাল মার্ডি একজন কৃষি শ্রমিক। মা সুকুমনি মুরমু একজন গৃহিণী। পরিবারের ২ভাই ২বোনের মধ্যে শান্তি মার্ডি দ্বিতীয়। বর্তমানে সে দক্ষিণ পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। আর্থিক অনটনের মাঝেও ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি ছিল শান্তি মার্ডির প্রবল টান।
গ্রামের মাঠে খেলা শুরু করে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত জায়গা করে নেন জাতীয় অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলে। এখন পর্যন্ত স্থানীয় ও জাতীয় ভাবে খেলাধুলায় অর্ধ শতাধিক পুরুস্কার অর্জনের সৌভাগ্য হয়েছে তার। ২০১৭ সালে দক্ষিণ পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালে আন্তঃপ্রাথমিক নারী ফুটবলে বীরগঞ্জ উপজেলার হয়ে চ্যাম্পিয়ন হন শান্তি মার্ডি।
তখন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দীন স্কুল শিক্ষক বাবুল বেসরা ও স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক মোঃ নাজিরুল ইসলাম নাজিরের অনুপ্রেরণায় শুরু হয় শান্তি মার্ডির নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণ। তবে প্রতিবন্ধকতা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পেতে দিনের পর দিন সংগ্রাম করতে হয়। এই কঠিন সময়ে সহায়তা করেন বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল। তার প্রচেষ্টায়ই শান্তি মার্ডির পথচলার সোনালি অধ্যায় সূচিত হয়।
বাংলাদেশের ফুটবলে শান্তি মার্ডি নারী দলের নেতৃত্বে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন এমনটি জানিয়ে শান্তি মার্ডির বাবা বাবু লাল মার্ডি বলেন, “আমার মেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এটা আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় পাওয়া।” আগামী দিনে যেন দেশের সন্মান আরও উজ্জ্বল করে এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। তবে বাড়ী টিভি না থাকায় মেয়ের পুরো খেলা দেখতে না পারায় খুব খারাপ লেগেছে তাদের।
স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক নাজিরুল ইসলাম বলেন, শান্তি মার্ডি এখন কেবল একজন ফুটবলার নন তিনি সাহস, সংগ্রাম আর স্বপ্নের নাম। তবে মানসম্মত খেলোয়ার তৈরিতে প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা, প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা। নারী ফুটবলের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় সাফল্য অর্জন করবে।
মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরী (শাহিন) বলেন, “শান্তির এই অর্জন শুধু তার নয়, পুরো এলাকার গর্ব। এমন প্রতিকুলতার মাঝেও যে একটি মেয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে তুলে ধরতে পারে শান্তি মার্ডি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশবাসী সকলে তার জন্য দোয়া করবেন যে যেন ভালো মানের খেলোয়াড় হতে পারে।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।