বগুড়ার মৃৎশিল্প টিকে আছে দইয়ের হাঁড়িতে
বগুড়ার মৃৎশিল্প টিকে আছে দইয়ের হাঁড়িতে
প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের আধিপত্যে হারাতে বসেছে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের ঐতিহ্য। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বগুড়ার ২০০ বছরের প্রাচীন মৃৎশিল্প আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবুও বাপ-দাদার এ ঐতিহ্যবাহী পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন অনেকে।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়ায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে সারি সারি মাটির ঢিবি ও চুল্লিতে পোড়ানোর অপেক্ষায় থাকা পাত্রের দৃশ্য। নারী-পুরুষ, এমনকি বৃদ্ধ থেকে শিশু—সবাই ব্যস্ত মাটির পাত্র তৈরিতে। বাপ-দাদার আমল থেকে শত বছরের পুরোনো এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছে দেড়শ থেকে দুইশ পরিবার।
মাটির যে কোনো পাত্র তৈরিতে মৃৎশিল্পীদের প্রথম কাজ কাদা তৈরি করা। এরপর চাকা বা বৈদ্যুতিক মেশিনে আকৃতি দিয়ে পাত্র শুকানো, পোড়ানো ও রং করার মাধ্যমে তৈরি হয় মাটির শিল্পকর্ম। প্রচলিত হাতচালিত চাকার জায়গা দখল করেছে বৈদ্যুতিক চাকা। এতে শ্রম কমছে, উৎপাদন বাড়ছে এবং ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে কারিগরদের অর্থনৈতিক অবস্থা।
তবে সবকিছু মিলিয়ে মৃৎশিল্পের টিকে থাকার প্রধান অবলম্বন এখন বগুড়ার দইয়ের হাঁড়ি। জেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন শত শত দইয়ের পাত্র তৈরি হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খুলনা, যশোর, কুমিল্লা, রংপুর, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম থেকে সিলেট পর্যন্ত যাচ্ছে এসব পাত্র। তবু পর্যাপ্ত আয় না থাকায় দুঃখ সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হচ্ছে শিল্পীদের।
এলাকার প্রবীণ মৃৎশিল্পী রমেন পাল বলেন, বগুড়ায় তৈরি দইয়ের হাঁড়ি বানিয়ে কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছি বাপ-দাদার পেশা।
অন্য মৃৎশিল্পীরা বলেন, একটি দইয়ের পাতিল বানাতে খরচ হয় ৩০ টাকা, সরা ৪ টাকা ও কাপ ৩ টাকা। স্থানীয় বাজারে এসব দইয়ের পাতিল ৫০ টাকা, সড়া ৭ থেকে ৮ টাকা ও কাপ ৯ টাকায় বিক্রি করা হয়; কিন্তু মাটির দাম, খড়, শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় লাভ কমে গেছে।
মৃৎশিল্পী রমা কান্ত পাল বলেন, এ পেশা রক্তে মিশে আছে। পরিশ্রম করতে হয় প্রচুর। রোদের মধ্যে বসে কাজ করতে হয়। মাটি কিনতে হয়, খরচ বেশি, তবুও পেশাটা ছাড়তে পারি না। তিনি তৈরি করতেন মাটির হাঁড়ি, থালা, বাটি, কলসি, ঢাকনাসহ অনেক কিছু। কিন্তু এখন শুধু দইয়ের হাঁড়ি তৈরি করেন। দইয়ের পাত্র প্রতি পিস পাইকারি বিক্রি করেন ৬ থেকে ৭ টাকা করে।
কথা হয় মনীন্দ্রনাথ পাল নামের প্রবীণ মৃৎশিল্পীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ও আমার ছেলেরা মিলে বাপ-দাদার এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। সবকিছুর দাম বেড়ে গেলেও আমাদের শ্রমের মূল্য বাড়েনি। তাই কোনোরকমে জীবিকানির্বাহ করে চলছি।
এলাকার ষাটোর্ধ্ব নারী কামিনী রানী বলেন, ‘আগে অনেক কিছু বানাতাম, এখন শুধু দইয়ের সরা। এখন আর লাভ নেই, তবুও না করলে খেয়ে বাঁচব কীভাবে।’
বগুড়া বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান বলেন, মৃৎশিল্প রক্ষায় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিল্পীদের স্বল্পসুদে ঋণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, যেন এ ঐতিহ্য হারিয়ে না যায়।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।