নবীজির জীবন ও বার্তা
নবীজির জীবন ও বার্তা
রবিউল আউয়াল মহানবী (সা.)-এর আগমনের মাস হিসেবে বিখ্যাত। কিন্তু এই মাসে শুধু তাঁর আগমনের ঘটনা ঘটেনি, বরং এ মাসে তাঁর জীবনের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। নিম্নে রবিউল আউয়াল মাসে সংঘটিত সিরাতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো—
১. পৃথিবীতে আগমন : মহানবী (সা.) হস্তী বাহিনীর ঘটনার বছর রবিউল আউয়াল মাসে মহানবী (সা.) কোনো এক সোমবার পৃথিবীতে আগমন করেন। প্রসিদ্ধ মতানুসারে সেদিন ছিল ১২ রবিউল আউয়াল।
তবে ২, ৮ ও ৯ রবিউল আউয়ালের মতও পাওয়া যায়। বিখ্যাত সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)-এর মা শিফা বিনতে আমর ছিলেন নবীজি (সা.)-এর ধাত্রী। জন্মের পর নবীজি (সা.)-কে দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে পাঠানো হয়। তিনি তাঁকে দেখে খুশি হন, তাঁকে নিয়ে কাবাঘরে প্রবেশ করেন, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করেন।
তিনি নবী (সা.)-এর নাম রাখেন মুহাম্মদ। সপ্তম দিনে আকিকা করেন এবং মানুষকে খাবার খাওয়ান। শৈশবে তিনি উম্মে আইমান বারাকা (রা.)-এর কাছে লালিত-পালিত হন। (সিরাতে মোস্তফা, পৃষ্ঠা ৫৩)
২. মদিনায় হিজরত : নবুয়তের ১৪তম বছরের রবিউল আউয়াল মাসে মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন।
মক্কাবাসীর সীমাহীন জুলুম ও অত্যাচারের মুখে আল্লাহ নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-কে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। বেশির ভাগ সাহাবি মদিনায় হিজরত করার পর নবীজি (সা.) বিশ্বস্ত সঙ্গী আবু বকর (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন। রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ মতান্তরে ১২ তারিখ তিনি মদিনায় পৌঁছান। তাঁর হিজরতের মাধ্যমে মদিনায় মুসলিম জাতি ও ইসলামী সভ্যতার জন্ম হয়।
(আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ১৮১)
৩. ইন্তেকাল : ১১ হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেন।
১২ রবিউল আউয়াল সোমবার দ্বিপ্রহরে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর পৃথিবী থেকে নবুয়তের শেষ সূর্য অস্ত যায়। আব্বাস (রা.), আলী (রা.), আব্বাস (রা.)-এর দুই ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা নবীজি (সা.)-এর গোসল, কাফন ও দাফন সম্পন্ন করেন। তাঁকে তিনটি ইয়েমেনি চাদর দ্বারা দাফন করা হয় এবং মঙ্গলবার তিনি যে ঘরে ইন্তেকাল করেন সে ঘরেই তাঁকে দাফন করা হয়। ঘরের ভেতরে দলে দলে সাহাবিরা গমন করেন এবং জানাজার নামাজ আদায় করেন। নবীজির জানাজার নামাজে কেউ ইমামতি করেনি। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৪৯১-৪৯২)
৪. উম্মে কুলসুম (রা.)-এর বিয়ে : হিজরতের প্রথম বছর রবিউল আউয়াল মাসে নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা উম্মে কুলসুম (রা.)-কে উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে দেন। (আল হাবিউল কাবির : ১৪/৬১)
৫. জি-আমর অভিযান : উহুদ যুদ্ধের আগে তৃতীয় হিজরি রবিউল আউয়াল মাসে নবী করিম (সা.)-এর নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। তিনি যখন সংবাদ পান বনু সালাবা ও বনু মুহারিবের লোকেরা মদিনায় আক্রমণ করতে সমবেত হচ্ছে, তখন তিনি চার ৪৫০ জন সাহাবিকে নিয়ে অভিযানে বের হন এবং উসমান (রা.)-কে মদিনায় নিজের প্রতিনিধি হিসেবে রেখে যান। মুসলিম বাহিনীর আগমনের সংবাদ শুনে শত্রুপক্ষ পালিয়ে যায়। (আল হাবিউল কাবির : ১৪/৬২)
৬. বনু নাজির অভিযান : চতুর্থ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে বনু নাজির অভিযান পরিচালিত হয়। উহুদ যুদ্ধের পর নবীজি (সা.) এক ব্যক্তির রক্তপণ আদায়ের জন্য বনু নাজির গোত্রে উপস্থিত হলে তারা ছাদের ওপর থেকে পাথর ফেলে নবীজি (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ ওহির মাধ্যমে তাদের এই ষড়যন্ত্র প্রকাশ করে দেন। তখন নবীজি (সা.) তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম : ১/২৮৪)
৮. বনু লাহয়ান অভিযান : ষষ্ঠ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে মহানবী (সা.)-এর নেতৃত্বে বনু লাহয়ানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। কেননা তারা কুরাইশের ইন্ধনে ইসলাম শেখার কথা বলে ১০ জন সাহাবিকে ডেকে নেন এবং তাদের নির্মমভাবে শহীদ করেন। নবীজি (সা.) তাদের এই ধৃষ্টতার শাস্তি দিতে ২০০ সাহাবিকে নিয়ে অভিযানে বের হন। কিন্তু মুসলিম বাহিনীর আগমনের খবর শুনে তারা পালিয়ে যায়। (আর রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ২৮৫)
এ ছাড়া রবিউল আউয়াল মাসে মসজিদে কুবা ও মসজিদে নববী নির্মাণ করা হয়, সারিয়ায়ে মুহাম্মদ বিন মাসলামা (রা.), গাজওয়ায়ে সাফওয়ান, সারিয়ায়ে হামজা (রা.) ও সারিয়ায়ে জায়িদ বিন হারিসা (রা.) সংঘটিত হয়।
আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.), তাঁর পরিবার ও অনুসারীদের ওপর শান্তি বর্ষণ করুন। আমিন।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।