ভারতীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে ‘টয়লেট আটকে দাও’ অভিযান

ভারতীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে ‘টয়লেট আটকে দাও’ অভিযান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন এইচ-১বি ভিসার জন্য এক লাখ ডলার ফি ঘোষণা করেন, তখন অতিমাত্রায় ডানপন্থী অনলাইন গোষ্ঠীগুলো ‘অপারেশন ক্লগ দ্য টয়লেট’ নামে একটি অভিযান চালায়। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এয়ারলাইন বুকিং সিস্টেমে চাপ সৃষ্টি করে যাতে ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে না পারে।
২১ সেপ্টেম্বর ট্রাম্পের ঘোষণা আসার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীদের মধ্যে। তারা নতুন ফি কার্যকর হওয়ার আগেই দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার চেষ্টা করেন।
এই সুযোগে ৪চ্যানসহ বিভিন্ন অতি-ডানপন্থি অনলাইন ট্রোল ফোরাম একজোট হয়ে ফ্লাইট বুকিং আটকে দেওয়ার অভিযান শুরু করে।
তাদের কৌশল ছিল, ভারত-আমেরিকা জনপ্রিয় রুটের ফ্লাইটে সিট নির্বাচন করে চেকআউট প্রক্রিয়ায় গিয়ে অর্থ না দেওয়া। এতে আসনগুলো সাময়িকভাবে আটকে যেত, ফলে প্রকৃত যাত্রীরা সিট বুক করতে পারতেন না। সময়সীমা শেষ হলে তারা আবার একই কাজ করত, ফলে নিয়মিত যাত্রীদের জন্য আসন অপ্রাপ্য হয়ে পড়ত ও টিকিটের দামও বেড়ে যেত।
তারা বিশেষ করে নিউইয়র্ক, নিউয়ার্ক ও ডালাসের মতো ব্যস্ত রুটগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে। আলোচনা চলেছে ৪চ্যান, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন ফোরামে, যেখানে ঘৃণাবাচক শব্দ ও নির্দেশনা ছড়ানো হচ্ছিল যাতে ভারতীয় কর্মীদের ভ্রমণ ব্যাহত হয়। মূল লক্ষ্য ছিল—‘ভারতীয়দের ভারতে আটকে রাখা’ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
এয়ার ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র অবশ্য এএফপিকে জানিয়েছেন, তাদের ওয়েবসাইটে কোনো বিঘ্ন হয়নি এবং স্বাভাবিকভাবেই কার্যক্রম চলেছে।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ৪চ্যান নামের অজ্ঞাতনামা অনলাইন বোর্ড দীর্ঘদিন ধরেই ইন্টারনেট মিম, ট্রোলিং অভিযান এবং উগ্রপন্থি কনটেন্টের সঙ্গে জড়িত।
একটি পোস্টে লেখা হয়েছিল, ‘এইচ-১বি সংবাদের পর ভারতীয়রা এখন ঘুম থেকে উঠছে। তাদের ভারতে রাখতে চাইলে? ফ্লাইট রিজার্ভেশন সিস্টেম আটকে দাও।’
অন্য এক মন্তব্যে বলা হয়, ‘বর্তমানে দিল্লি থেকে নিউয়ার্কের শেষ সিটটা আটক করে রেখেছি।’
এ ছাড়া সেখানে নৃশংস ঘৃণাবাচক কথাবার্তাও ছড়ানো হয়, যেমন— ‘টোটাল জিত ডেথ’, ‘যে কোনো জিত দেখলেই হত্যা করো’,‘যত কিছু করা লাগে করো, কিন্তু পশ্চিমকে মলমুক্ত করো।’
(‘জিত’ শব্দটি দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষদের নিয়ে ব্যবহার করা এক প্রকার বর্ণবাদী অপবাদ।)
অস্টিনভিত্তিক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অমৃতা তামানাম ভারত সফরে ছিলেন। ট্রাম্পের ঘোষণার পর দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার টিকিট কাটতে গিয়ে তিনি একাধিকবার সমস্যায় পড়েন। বিভিন্ন এয়ারলাইনের ওয়েবসাইট অস্বাভাবিকভাবে ক্র্যাশ হচ্ছিল, চেকআউট পেজ হঠাৎ টাইম আউট হয়ে যাচ্ছিল। বহু চেষ্টার পর তিনি অবশেষে প্রায় ২ হাজার ডলারে কাতার এয়ারওয়েজে ডালাসের একমুখী টিকিট পান, যা তার মূল রাউন্ড-ট্রিপ ভাড়ার দ্বিগুণেরও বেশি।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘টিকিট কাটা আমার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আর আতঙ্কে ভ্রমণের কারণে আমাকে অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে।’
যদিও পরবর্তী সময়ে হোয়াইট হাউস স্পষ্ট করে জানায়, এক লাখ ডলারের এই ফি কেবল নতুন এইচ-১বি আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘যাদের ইতোমধ্যে এইচ-১বি ভিসা আছে এবং যারা বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে এক লাখ ডলার দিতে হবেন না।’
সূত্র : এনডিটিভি
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।