রাজশাহী সিটি কপোরেশনের সচিবের অপসারণের দাবি ঠিকাদারদের
রাজশাহী সিটি কপোরেশনের সচিবের অপসারণের দাবি ঠিকাদারদের
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সচিব রুমানা আফরোজ এর অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঠিকাদাররা। ঠিকাদারদের বিল অনুমোদন করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে সচিবের বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন ফাইল টেবিলে ফেলে রাখায় ক্ষোভে ফুঁসছেন ঠিকাদাররা। এ অবস্থায় আগামী বুধবার, ২৩ জুলাই থেকে সব উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রোববার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারের কনফারেন্স রুমে ‘রাজশাহীর সচেতন নাগরিক সমাজ ও রাসিক ঠিকাদারবৃন্দ’-এর ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে রাসিকে স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ ও সচিব রুমানা আফরোজকে অপসারণের দাবি জানান সংবাদ সম্মেলনের আয়োজকেরা।
তারা বলেন, সচিব রুমানা আগেও যেসব জায়গায় কর্মরত ছিলেন, সেখানেও জনভোগান্তির ইতিহাস রয়েছে। লিখিত বক্তব্যে ঠিকাদার তরিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম এবং সচিব রুমানা আফরোজ ভোগান্তি বাড়িয়ে সেবাগ্রহীতাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়েছেন। তারা রাসিকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অসংখ্য প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন।
ফ্যাসিবাদী আচরণের জন্য পরিচিত এই সচিবের বিরুদ্ধে জনভোগান্তির নানা অভিযোগ রয়েছে, যা থেকে মুক্তি চাই আমরা।’ তিনি বলেন, ‘গত এপ্রিল মাসে রাসিকে যোগদানের পর থেকেই সচিব রুমানা সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করে চলেছেন। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বিলের ফাইল তিনি মাসের পর মাস আটকে রাখছেন। কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা ছাড়াই বিল প্রদানে গড়িমসি করা হচ্ছে।
ঠিকাদাররা সচিবের কক্ষে গেলে তাদের সঙ্গে তিনি অসদাচরণ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যথাসময়ে বিল না পাওয়ায় অনেক উন্নয়ন কাজের গতি থেমে গেছে। কোথাও কোথাও কাজ পুরোপুরি বন্ধ। এতে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। আমাদের আশঙ্কা, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে উচ্চপর্যায়ের কেউ এই ধরনের কর্মকাণ্ডে ইন্ধন দিচ্ছেন।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার খামখেয়ালিপনার কারণে বিদ্যুৎ বিল দিতে দেরি হওয়ায় রাসিককে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে।
তারা নিয়মিত অফিসে আসেন না, জনসাধারণের সমস্যা নিয়েও কথা বলতে চান না। তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব ফাইল তিন–চার দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা, সেগুলো মাসের পর মাস আটকে থাকে। কনজারভেন্সি শাখা, পরিবহন বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগসহ বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করলেও চাকরির ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। অবসরে যাওয়া কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রেও স্বাক্ষর করছেন না সচিব।’
তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন বিলগুলোর ফাইলও মাসের পর মাস ফেলে রাখা হচ্ছে।’ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, হোল্ডিং নম্বর কিংবা এনওসি পেতে জনগণকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এনওসি পাওয়ার ক্ষেত্রে যেখানে সর্বোচ্চ চার দিন লাগার কথা, সেখানে তা পেতে লাগছে আড়াই মাস।
ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন কিংবা নতুন করে নিতে গেলেও মানুষ নানা হয়রানির মধ্যে পড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ার্ডের ভেতরের অনেক জায়গায় বৈদ্যুতিক ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও মাসের পর মাস লাইট জ্বলে না। ভাতা পেতেও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে ঘুরতে হচ্ছে।’ অস্থায়ী প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ।
এই দায়িত্ব তাঁর জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তরিকুল। বলেন, ‘রাসিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ জরুরি।’ সচিবের অপসারণ ও স্থায়ী প্রশাসক নিয়োগসহ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে রাজশাহীর সব উন্নয়ন কাজ আগামী ২৩ জুলাই থেকে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন ঠিকাদাররা।
এ ছাড়াও ২৭ জুলাই নগর ভবনের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেলাল খান, তৌহিদুল ইসলাম সেলিম, আজিজুল হক ভুঁইয়া, গাজী সালাহউদ্দীন, ইয়াহিয়া খান মিলু, রেজাউল ইসলাম, মো. আমিন ও মো. শওকত প্রমুখ। অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী সিটি কপোরেশনের সচিব রুমানা আফরোজ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।