নিহত পাইলটের রাজশাহী বাসায় শোকের মাতম, স্বজনদের নেওয়া হলো ঢাকা

নিহত পাইলটের রাজশাহী বাসায় শোকের মাতম, স্বজনদের নেওয়া হলো ঢাকা

21 July, 2025 | সময়: 8:41 pm

ঢাকায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম সাগরের মৃত্যুর খবরে রাজশাহীতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

সোমবার (২১ জুলাই) রাজশাহী নগরীর উপশহরে তার বাসার সামনে দুপুর থেকে ভিড় করছেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, কেউ কেউ হতভম্ব হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন ‘আশ্রয়’ নামের সেই বাসার সামনে।

রাজশাহী নগরীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ২২৩ নম্বর বাড়িটিতে ভাড়া থাকেন তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন এবং ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন। আশেপাশের মানুষ জানান, এই পরিবার অত্যন্ত মিশুক। তৌকির ছিলেন ভদ্র ও মেধাবী তরুণ।

তৌকিরের পরিবার প্রায় ২৫ বছর ধরে রাজশাহীতে ভাড়া থাকেন। সবশেষ তারা ‘আশ্রয়’ নামের এই বাড়িটির তিনতলায় উঠেছেন। তৌকির ছিলেন দুই ভাই বোনের বড়। তার ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

নিহত পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরের মামা রফিকুল ইসলাম জানান, বিকেলে ৫টার দিকে র‍্যাবের একটি গাড়িতে করে তৌকিরের বাবা-মা, বোন সৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী ডা. তুহিন ইসলাম এবং আরেক মামা মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর থেকে তাদের বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় নেওয়া হয়। নিহত তৌকির ইসলাম সাগরের স্ত্রী ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার।

বছর খানেক আগে বিয়ে করেছিলেন তৌকির ইসলাম। তৌকিরের মামা রফিকুল ইসলাম চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘এ রকম ভালো ছেলে আমি আর দেখিনি। তার মতো পরিশ্রমী, ভদ্র, মেধাবী ছেলেকে এভাবে হারিয়ে ফেলব-ভাবতেই পারিনি।’ স্বজনেরা জানান, তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা হলেও গত প্রায় ২৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রাজশাহীতেই বসবাস করছেন।

পেশায় তিনি আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায়ী। তৌকির রাজশাহীর নিউ গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ওই কলেজের ৩৪তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তৌকির যোগ দেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে।

তৌকিরের মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ির সামনে এসেছেন পাবনা ক্যাডেট কলেজে তার সাবেক প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, “তৌকির খুবই মেধাবী, ভীষণ ভদ্র এবং শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। সে ছোটদের স্নেহ করত, বড়দের সম্মান দিত। ওর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।” গত বছর থেকে রাজশাহীর সপুরায় নিজস্ব জমিতে তিনতলা একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম সাগর। কাজ এখনও শেষ হয়নি। সেই বাড়িটিতে আর উঠা হলো না তার।

নিহত পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরের মেজ চাচা মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার (পাইলট) মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এরপর বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছোট ভাই ঢাকায় গিয়ে মরদেহ নিয়ে আসার পর পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- সাগরের দাফন রাজশাহীতে না সোনা মসজিদে হবে।’

📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের ইনস্টাগ্রাম ভিজিট করুন।