অ্যাসাইলাম আবেদন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের চিন্তা যুক্তরাজ্যের
অ্যাসাইলাম আবেদন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের চিন্তা যুক্তরাজ্যের
যুক্তরাজ্য সরকার অ্যাসাইলাম বা আশ্রয়প্রার্থীদের আপিল প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। হোটেলে থেকে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের সংখ্যা যাতে কমানো যায়, সে জন্য এই পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকার বলছে, একটি স্বাধীন সংস্থা গঠন করা হবে, যেখানে স্বতন্ত্র বিচারকরা দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি করবেন। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেছেন, এই ইস্যুতে বিলম্ব মেনে নেওয়া যায় না। যত দ্রুত সম্ভব তিনি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
যুক্তরাজ্যে যারা বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় চেয়েছেন, তাদের থাকার জন্য কিছু হোটেলে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, এই হোটেলগুলো অ্যাসাইলাম হোটেল নামে পরিচিত। অ্যাসাইলাম হোটেলের ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে ক্রমে চাপ বাড়ছে যুক্তরাজ্য সরকারের ওপর, এখন এটাকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। এবারের পার্লামেন্টে মন্ত্রীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকারের বর্তমান মেয়াদের মধ্যেই অ্যাসাইলাম হোটেলগুলো বন্ধ করা হবে।
তবে বর্তমানে প্রায় ৩২ হাজার আশ্রয়প্রার্থী এ ধরনের হোটেলে অবস্থান করছেন। ইভেট কুপার বলেন, ‘আশ্রয় আবেদন নিয়ে প্রাথমিক কিছু সিদ্ধান্তের কাজ দ্রুতগতিতে নেওয়া হচ্ছে। তবে যাদের অ্যাসাইলাম নাকচ করা হচ্ছে, তারা আবার আপিল আবেদন করছেন। এ ক্ষেত্রে একটা অগ্রহণযোগ্য বিলম্ব হচ্ছে।’
প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার গতি বাড়লেও প্রত্যাখ্যাত আবেদনকারীদের আপিলপ্রক্রিয়ায় গড়ে এক বছরেরও বেশি সময় লাগছে। বর্তমানে প্রায় ৫১ হাজার আপিলের রায় অপেক্ষমাণ। এই সময়ে করদাতাদের অর্থে তাদের ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে।
এখন আপিল শুনানির জন্য একটি নতুন স্বাধীন প্যানেল গঠন করা হবে। মন্ত্রীরা বিশ্বাস করেন, এই প্যানেল আদালতের তুলনায় দ্রুত রায় দেবে।
সরকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এবারের শরতেই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
এদিকে কনজারভেটিভ পার্টি বলেছে, বর্তমান ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল। অন্যদিকে রিফর্ম ইউকে বলেছে, যারা অবৈধ বা অনিয়মিত পথে এসেছে তাদের গণহারে বহিষ্কার করতে হবে।
আশ্রয়প্রার্থীদের কোথায় রাখা হচ্ছে তা নিয়ে জনঅসন্তোষ বেড়েছে সম্প্রতি। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শনিবার হোটেল ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। জুলাই থেকে ইপিং শহর বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার মানুষ বেল হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ করেছে। কারণ সেখানে থাকা এক আশ্রয়প্রার্থীর বিরুদ্ধে শহরের এক ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তোলা হচ্ছে।
এ ছাড়া হাইকোর্ট ইপিং কাউন্সিলের পক্ষে রায় দিয়ে মঙ্গলবার অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, যাতে বেল হোটেলে আর আশ্রয়প্রার্থী রাখা না হয়। আদালতে বলা হয়েছে, হোটেলটি স্থানীয় পরিকল্পনানীতি ভেঙে অনুমতি ছাড়াই তাদের ব্যবহারবিধি পরিবর্তন করেছে, যা জননিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করেছে। বর্তমানে যারা সেই হোটেলে আছেন, তাদের ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে।
সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকার চাইছে। কুপার বলেছেন, সরকার সব অ্যাসাইলাম হোটেল বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর, তবে এটি করতে হবে ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায়’।
রায়ের পর আরো কয়েকটি কাউন্সিল আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। এর মধ্যে টোরি নিয়ন্ত্রিত হিলিংডন কাউন্সিলও রয়েছে, যেখানে বর্তমানে দুই হাজার ২৩৮ জন আশ্রয়প্রার্থী আছে।
কনজারভেটিভ পার্টির নেত্রী কেমি বাডেনক একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন, যাতে কনজারভেটিভ কাউন্সিল নেতাদের বলা হয়েছে, ‘যদি আপনার আইনি পরামর্শ সমর্থন করেন, তাহলে একই পদক্ষেপ নিন।’
অন্যদিকে রিফর্ম ইউকের নাইজেল ফারাজ টেলিগ্রাফে লিখেছেন, তার দলের নিয়ন্ত্রিত কাউন্সিলগুলো ‘সামর্থ্য অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে’ এবং ইপিংয়ের অনুসরণ করবে।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের ৩০০টির বেশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে ১৩১টি এলাকায় বর্তমানে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা হচ্ছে ‘অস্থায়ী আবাসনে’, যা প্রধানত হোটেল দিয়ে পরিচালিত। এই ১৩১ এলাকায় ৭৪টি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে লেবার পার্টির, ৩০টি লিবারেল ডেমোক্র্যাটের, ১৯টি কনজারভেটিভের, ৯টি গ্রিন পার্টির ও একটি রিফর্ম ইউকের নিয়ন্ত্রণাধীন।
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।