৮০ বছর পর বিজ্ঞাপনে পাওয়া গেল নাৎসিদের লুট করা শিল্পকর্ম
৮০ বছর পর বিজ্ঞাপনে পাওয়া গেল নাৎসিদের লুট করা শিল্পকর্ম
নাৎসিরা ৮০ বছর আগে আমস্টারডামের এক ইহুদি শিল্প ব্যবসায়ীর কাছ থেকে যে ইতালীয় শিল্পকর্ম চুরি করেছিল, সেটি হঠাৎই পাওয়া গেছে আর্জেন্টিনায়। মূলত একটি বাড়িটি বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
বুধবার (২৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ডাচ সংবাদপত্র এডি জানিয়েছে, জিউসেপ্পে গিসলান্দির আঁকা ‘পোর্ট্রেট অব আ লেডি’ নামের ছবিটি দেখা গেছে বুয়েনস আইরেসের কাছে একটি বাড়ির বসার ঘরে সোফার উপরে ঝোলানো অবস্থায়। ওই বাড়ির মালিক ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে যাওয়া এক জ্যেষ্ঠ নাৎসি কর্মকর্তা। তার মেয়ে যখন বাড়িটি বিক্রির জন্য বাজারে তোলেন, তখনই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
বিবিসি বলছে, চিত্রকর্মটি যুদ্ধকালে হারিয়ে যাওয়া শিল্পকর্মের আন্তর্জাতিক ডাটাবেসে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এটি ডাচ ইহুদি শিল্প ব্যবসায়ী জ্যাক গাউডস্টিকারের সংগ্রহের অংশ ছিল। যুদ্ধকালে বহু ইহুদিকে পালাতে সহায়তা করেছিলেন তিনি।
গাউডস্টিকার নিজে নেদারল্যান্ডস থেকে পালানোর সময় জাহাজ দুর্ঘটনায় সমুদ্রে মারা যান এবং ইংল্যান্ডে সমাহিত হন। তার মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ নাৎসিরা তার সংগ্রহ থেকে ১১০০টিরও বেশি শিল্পকর্ম জোরপূর্বক কিনে নেয়। এর মধ্যে নাৎসি সেনাপ্রধান হারম্যান গোরিংও ছিলেন।
যুদ্ধ শেষে কিছু শিল্পকর্ম জার্মানি থেকে উদ্ধার করে আমস্টারডামের রাইকসমিউজিয়ামে জাতীয় সংগ্রহ হিসেবে প্রদর্শন করা হয়। পরে গাউডস্টিকারের একমাত্র উত্তরাধিকারী পুত্রবধূ মারেই ভন সাহার ২০০৬ সালে ২০২টি শিল্পকর্ম ফেরত পান।
কিন্তু গিসলান্দির আঁকা কন্তেসা কোলিওনির প্রতিকৃতি সেই তালিকায় পাওয়া যাচ্ছিল না। এডির অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি ছিল এসএস অফিসার ও গোরিংয়ের আর্থিক সহকারী ফ্রিডরিখ ক্যাডজিয়েনের কাছে। ১৯৪৫ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডে পালিয়ে যান, পরে ব্রাজিল হয়ে আর্জেন্টিনায় গিয়ে সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন।
আমেরিকান তদন্তকারীরা ক্যাডজিয়েনকে “সবচেয়ে নিচু ধরনের সাপ” বলে বর্ণনা করেছিলেন। ১৯৭৯ সালে তার মৃত্যু হয়। মার্কিন নথিপত্রে উল্লেখ ছিল—“তার বিপুল সম্পদ রয়েছে, এখনো আমাদের কাজে আসতে পারে।”
এডি জানায়, বছরের পর বছর সাবেক ওই নাৎসি কর্মকর্তার দুই কন্যার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সৌভাগ্যক্রমে, তাদের একজন যখন পারিবারিক বাড়িটি একটি নামী এজেন্সির মাধ্যমে বিক্রির জন্য তোলেন, তখন সেই ছবির উপস্থিতি ধরা পড়ে।
নেদারল্যান্ডসের কালচারাল হেরিটেজ এজেন্সি ছবিটি পর্যালোচনা করে জানায়, “এটি নকল হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
এডি আরও জানায়, আরেকটি চুরি যাওয়া শিল্পকর্ম — ডাচ শিল্পী আব্রাহাম মিগনের ফুলের স্থিরচিত্র — ক্যাডজিয়েনের এক কন্যার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া গেছে। যখন সংবাদপত্রটি বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন একজন জানান, “আমি জানি না আপনি কী তথ্য চান এবং কোন ছবির কথা বলছেন।”
গাউডস্টিকারের উত্তরাধিকারীদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা এই শিল্পকর্ম ফেরত আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। ভন সাহার বলেন, “আমার পরিবারের লক্ষ্য জ্যাক গাউডস্টিকারের সংগ্রহ থেকে লুট করা প্রতিটি শিল্পকর্ম ফিরিয়ে আনা।”
📷 ইনস্টাগ্রাম নোটিশ:
সার্ভারে জায়গা স্বল্পতার কারণে ছবি সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ছবি পেতে আমাদের
ইনস্টাগ্রাম
ভিজিট করুন।